আল-শিফা হাসপাতালের নিচে হামাসের কমান্ড সেন্টার : দাবি যুক্তরাষ্ট্রেরও

Anweshan Desk

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৫ নভেম্বর ২০২৩, ১৪:২০ পিএম


আল-শিফা হাসপাতালের নিচে হামাসের কমান্ড সেন্টার : দাবি যুক্তরাষ্ট্রেরও

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল শিফা এর নিচে হামাসের কমান্ড সেন্টার রয়েছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির দাবি, হাসপাতালের নিচে ওই কমান্ড সেন্টারে হামাস অস্ত্রও জড়ো করেছে।

এর আগে ইসরায়েলও একই দাবি করেছিল এবং পরে হাসপাতালটিতে অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। বুধবার (১৫ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালের নিচে হামাসের কমান্ড সেন্টার রয়েছে বলে তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটির মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, হামাস সেখানে অস্ত্র মজুত করেছে এবং ইসরায়েলি হামলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে।

এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীও দাবি করেছিল, হাসপাতালের নিচে অবস্থিত একটি টানেলে হামাস কমান্ড-এন্ড-কন্ট্রোল সেন্টার পরিচালনা করছে। তবে হামাস এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এটি অস্বীকার করেছে।

পরে যুক্তরাষ্ট্রও দাবি করল, হাসপাতালের নিচে হামাসের কমান্ড সেন্টার রয়েছে বলে তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে।

বিবিসি বলছে, হাসপাতালে আটকে পড়া বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষার জন্য ইসরায়েল যখন ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চাপের সম্মুখীন হয়েছে, ঠিক সে সময়ই যুক্তরাষ্ট্রের এই বক্তব্য সামনে এলো।

যদিও গাজা ভূখণ্ডের হাসপাতালগুলোকে অবশ্যই সুরক্ষিত রাখতে হবে বলে একদিন আগেই মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এছাড়া যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও বলেছেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইনের মধ্যে কাজ করতে হবে।

তবে বাস্তবতা হচ্ছে, গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফার চারপাশের এলাকা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে চলমান যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। অবশ্য হামাস তার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য হাসপাতাল ব্যবহার করার বিষয়টি অস্বীকার করেছে এবং এ বিষয়ে কোনও আন্তর্জাতিক কমিটিকে এসে পরিদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার জন কিরবি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকা নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, হামাস ও ইসলামিক জিহাদ গাজা উপত্যকায় বিভিন্ন হাসপাতাল এবং তাদের নিচে থাকা টানেলগুলো তাদের গোপন সামরিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে এবং বন্দিদের আটকে রাখতে ব্যবহার করেছে।

অবশ্য এর আগে মার্কিন প্রশাসন শুধুমাত্র উন্মুক্ত উৎস থেকে পাওয়া গোয়েন্দা তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়েছিল এবং সেসময় এ বিষয়ে তাদের নিজস্ব উৎস থেকে পাওয়া কোনও তথ্য আছে কিনা তা নিশ্চিত করেনি।

মঙ্গলবার জন কিরবি বলেন, ‘হামাস এবং ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের সদস্যরা গাজা শহরের আল-শিফা থেকে একটি কমান্ড এবং কন্ট্রোল সিস্টেম পরিচালনা করে। তারা সেখানে অস্ত্র মজুত করেছে এবং ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে।’

কিরবি বলেন, ইসরায়েলি অভিযান কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল তা এতে ফুটে উঠেছে। কারণ ‘বেসামরিক মানুষের মধ্যে নিজেদের গভীরভাবে সম্পৃক্ত করে রেখেছে হামাস’।

তিনি বলেন, ‘স্পষ্ট করে বলতে গেলে, আমরা হাসপাতালে বিমান হামলাকে সমর্থন করি না এবং আমরা হাসপাতালে গুলির লড়াইও দেখতে চাই। সেখানে নিরপরাধ মানুষ, অসহায় মানুষ, অসুস্থ ব্যক্তিরা কেবল তাদের প্রাপ্য চিকিৎসা সেবা পাওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের ক্রসফায়ারের মধ্যে পড়া উচিত নয়। হাসপাতাল এবং রোগীদের অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।’

এদিকে মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হামাস। বার্তাসংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে প্রকাশিত হামাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটনের এই মন্তব্য হাসপাতালে ‘নৃশংস গণহত্যা’ চালানোর জন্য ইসরায়েলকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেবে। অভিযানের নামে ইসরায়েল গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ধ্বংস করবে এবং ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করবে।

 

অন্যদিকে গাজা ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা কেন্দ্র আল-শিফা হাসপাতালে ঢুকে পড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলও নিশ্চিত করেছে, তারা আল-শিফা হাসপাতালে হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, ‘গোয়েন্দা তথ্য এবং অপারেশনাল প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে’ আল-শিফা হাসপাতালের বেশ কিছু অংশে তারা ‘হামাসের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট এবং টার্গেটেড অভিযান’ চালাচ্ছে। তাদের দাবি, তারা সম্প্রতি গাজার কর্তৃপক্ষকে হাসপাতালের মধ্যে সমস্ত সামরিক কার্যকলাপ বন্ধ করতে বলেছিল, কিন্তু তা করা হয়নি।

এছাড়া আল জাজিরা জানিয়েছে, গাজার আল-শিফা হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ইসরায়েলি ট্যাংক ও বুলডোজার প্রবেশ করেছে। আল-শিফার ডাক্তার মোখাল্লালাতি বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী আল-শিফা কমপ্লেক্সের ভেতরে রয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনও পর্যাপ্ত তথ্যের ঘাটতি রয়েছে।

মোখাল্লালাতি বলেন, ‘আমরা হাসপাতালের কেন্দ্রে ট্যাংক এবং বুলডোজার দেখেছি।’

এর আগে আল-শিফা হাসপাতালের চারদিক থেকে ট্যাংক দিয়ে ঘিরে ফেলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এই হাসপাতালের ভেতরে শত শত রোগী রয়েছেন; যাদের মধ্যে অনেক শিশুও আছে। জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে হাসপাতালটির জেনারেটর। যে কারণে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন রোগীরা এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে (ডব্লিউএইচও) মঙ্গলবার জানায়, গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতাল ‘প্রায় কবরস্থানে’ পরিণত হয়েছে। হাসপাতালের স্থাপনার ভেতরে এবং বাইরে মরদেহ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এমনকি তাদের দাফনের ব্যবস্থাও করা সম্ভব হচ্ছে না।


Link copied