নওগাঁয় র‌্যাব হেফাজতে মৃত্যু: যুগ্ম সচিবের উপস্থিতিতে জেসমিনকে তুলে আনে র‌্যাব

Anweshan Desk

Anweshan Desk

২৭ মার্চ ২০২৩, ২০:৪৫ পিএম


নওগাঁয় র‌্যাব হেফাজতে মৃত্যু:  যুগ্ম সচিবের উপস্থিতিতে জেসমিনকে তুলে আনে র‌্যাব

ছবি : যুগ্ম সচিব এনামুল হক এবং নিহত সুলতানা জেসমিন

নওগাঁয় ‘র‌্যাব হেফাজতে’ মৃত্যু হওয়া সুলতানা জেসমিনকে একজন যুগ্ম সচিবের অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করেছিলো র‌্যাব। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত ওই যুগ্ম সচিবের নাম এনামুল হক। নওগাঁ সদর উপজেলার ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনকে র‌্যাব আটক করার সময়ও ওই যুগ্ম সচিব সেখানে উপস্থিত ছিলেন । গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের মুক্তির মোড় থেকে তাকে র‌্যাব সদস্যরা তুলে নিয়ে যান র‌্যাব-৫ এর ক্যাম্প অফিসে। ওইদিন অসুস্থ অবস্থায় জেসমিনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পরের দিন ২৩শে মার্চ জেসমিনের বিরুদ্ধে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন যুগ্ম সচিব মো. এনামুল হক। গত শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেসমিনের মৃত্যু হয়। পরের দিন র‌্যাব সদস্যদের উপস্থিতিতেই জেসমিনকে দাফন করার কথা জানিয়েছেন তার স্বজনরা। র‌্যাব জানিয়েছে পুরনো অভিযোগের ভিত্তিতে জেসমিনকে আটক করা হয়েছিল। যদিও স্থানীয় থানা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলা ছাড়া আর কোনো লিখিত অভিযোগের তথ্য জানাতে পারেনি।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলার অভিযোগের বরাত দিয়ে সংশ্লিষ্ট তদন্ত সূত্র জানায়, মামলার বাদী স্থানীয় সরকার রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার অফিস এর পরিচালক যুগ্ম সচিব মো. এনামুল হক। র‌্যাব সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে যুগ্ম সচিব এনামুল সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে রাজপাড়া থানায় গত ২৩শে মার্চ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন এবং  মামলার অভিযোগে বলা হয়, তার ছবি ব্যবহার করে একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা করা হয়।

এরপর সেসব তথ্য দিয়ে মানহানিকর তথ্য প্রচার ও প্রকাশ করার অভিযোগ আনা হয় সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় যুগ্ম সচিবের পরিচয় এবং পদবি ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণামূলকভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।  

এদিকে আসামি সুলতানা জেসমিনের প্রতারণা সম্পর্কে তেমন কিছু জানা নেই পুলিশের। ওই নারীকে র‌্যাব কখন, কীভাবে তুলে নিয়ে গেছে কিছুই জানেন না সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।

মামলা সম্পর্কে রাজপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক শুভাস চন্দ্র বলেন, ইলেক্ট্রনিকস ডিভাইস এর মাধ্যমে যুগ্ম সচিবের পরিচয় ব্যবহার করে বিনা অনুমতিতে তথ্য সংগ্রহ করে মানহানিকর তথ্য প্রচার ও প্রকাশের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৪ (২), ২৫ (২), ২৬ (২), ২৯ (১)/৩৫ ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে জানতে স্থানীয় সরকার রাজশাহী বিভাগ এর পরিচালক যুগ্ম সচিব মো. এনামুল হককে একাধিকবার ফোন এবং এসএমএস পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

নিহত জেসমিনের মামা নাজমুল হক মন্টু বলেন, প্রতারণার মামলার বিষয়ে আমরা এখন পর্যন্ত অন্ধকারে। মামলা হলে সাধারণত পুলিশ তদন্ত করে। সেখানে র‌্যাব তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের কাছে ব্যতিক্রম বলে মনে হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা মামলার কোনো তথ্য বা কপি পাইনি। তিনি বলেন, আমার ভাগনির মৃত্যুর বিষয়টি এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে সন্দেহজনক। এই মৃত্যুটি স্বাভাবিক মৃত্যু হলে আমাদের কিছু বলার ছিল না। কোনো মামলা করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি সম্পর্কে পারিবাকিভাবে বসে সিদ্ধান্ত নেবো।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, আমাদের এখানে জরুরি বিভাগে তাকে র‌্যাবের সদস্যরা নিয়ে আসেন। এ সময় তার মাথার ডান পাশে কানের উপরে হালকা একটি আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ সময় তিনি অজ্ঞান ছিলেন। এবং রোগীর অবস্থা খারাপ ছিল। আমরা তাকে নিউরো সার্জারিতে পাঠাই। সেখানে একটি সিটি স্ক্যানে মস্তিষ্কের বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষরণ ধরা পড়ে। যেটা আঘাতজনিত কারণ এবং স্ট্রোক করলে হয়। এরপর তাকে আইসিইউতে পাঠানোর পর ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থায় ২৪শে মার্চ মারা যান।

এদিকে র‌্যাব সদস্যরা জানায়, র‌্যাব যখন জিজ্ঞাসাবাদ করে তখন সুলতানা জেসমিন একপর্যায়ে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। এটা তাদের বক্তব্য।

র‌্যাব-৫ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. নাজমুস সাকিব বলেন, র‌্যাব হেফাজতে তার মৃত্যু হয়নি। প্রতারণার অভিযোগে জেসমিনকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠাই। তাকে ডাকার পরে অসুস্থ হলে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখান থেকে রাজশাহী হাসপাতালে আনা হয়। পরবর্তীতে তিনি স্ট্রোক করে মারা যান। আমরা তাকে ক্যাম্পে আনিনি। জেসমিনকে প্রকাশ্যে র‌্যাবের সদস্যরা টেনেহিঁচড়ে নিয়ে এসেছেন এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এই অভিযোগ সত্য নয়।


Link copied