ট্রান্সজেন্ডার হওয়ায় নর্থ সাউথের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেয়া হয়নি হোচিমিন ইসলামকে

Anweshan Desk

Anweshan Desk

২৫ নভেম্বর ২০২৩, ২১:২৮ পিএম


ট্রান্সজেন্ডার হওয়ায় নর্থ সাউথের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেয়া হয়নি হোচিমিন ইসলামকে

রূপান্তরকামী নারী ও অধিকারকর্মী হো চি মিন ইসলাম

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার অ্যান্ড প্লেসমেন্ট সেন্টারের (সিপিসি) উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কেবল ট্রান্সজেন্ডার নারী পরিচয়ের কারণে আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে অংশ নিতে পারেন নি হোচিমিন ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু মৌলবাদী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ওই অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যের সেশনটি বাতিল করা হয়।বিষয়টি নিয়ে নিজের ফেসবুকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি। 

তিনি জানান, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ও কিছু শিক্ষকের তোপের মুখে আলোচনা করতে যেতে দেওয়া হয়নি তাকে। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে প্রবেশ করতে দেওয়ার কথা জানালেও পরে ‘মধ্যরাতে নিরাপত্তা দিতে পারবে না’ বলে জানানো হয়। এ নিয়ে হোচিমিনের দাবি, এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গত কিছুদিন ধরেই তাকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছিল। যদিও এ বিষয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিক কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

দুই দিনব্যাপী ‘উইমেন্স ক্যারিয়ার কার্নিভাল’-এর এই অনুষ্ঠান শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) শুরু হয়। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ‘হিরোস ফর অল (এইচএফএ)’ ও ‘আই-সোশ্যাল’।  অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য নেটওয়ার্কিং, লার্নিং এবং পেশাগত উন্নয়নের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন। আয়োজকরা জানান, হোচিমিনকে ছাড়াই তাদের আয়োজন সম্পন্ন করতে হয়েছে। এ বিষয়ে রবিবারের (২৬ নভেম্বর) মধ্যে তারা আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেবেন।

হোচিমিন ইসলাম যখন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না বলে সিদ্ধান্ত হয়, বিষয়টি জানার পর তিনি তার ফেসবুকে পুরো বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কীভাবে আয়োজক ও নর্থ সাউথ কর্তৃপক্ষ একাধিকবার যোগাযোগের মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নেন, হোচিমিনের অনুষ্ঠানস্থলে যাওয়া নিরাপদ নয় এবং কর্তৃপক্ষও কোনও নিরাপত্তা দিতে পারবে না। পরে তিনি নিজে থেকেই আয়োজকদের কোনও অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চান না বলে জানান। হোচিমিনের লেখাতেই উঠে আসে — কীভাবে ‘ইসলামিক প্র্যাকটিশনার ফর এনএসইউ’ নামের একটা ফেসবুক পেইজ থেকে ভিসিকে ইমেইল করে বলা হয়, হোচিমিন বাংলাদেশের আইন অমান্য করে ক্রিমিন্যাল অ্যাক্টিভিটিজ করছেন। সেখানে সমকামিতাকে প্রচার করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়। এমনকি মেইলে এ নিয়ে ‘স্টুডেন্টরা প্রটেস্ট করছে’, তারা এক্সাম বয়কট করবে, এমনকি দাঙ্গাও হতে পারে বলে হুমকি দেওয়া হয়।

আয়োজক ‘হিরো’স ফর অল’-এর প্রতিষ্ঠাতা রেহনুমা করীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অন্বেষণ নিউজকে  জানান, হোচিমিনের সেশন বাদ দিয়েই তাদের অনুষ্ঠান করতে হয়েছে। তিনি বলেন,  ‘হোচিমিনের সেশন ও ছবিসহ পোস্টার করার পর থেকেই নর্থ সাউথের ভেতর ও বাইরের কিছু গ্রুপ হুমকি দিতে শুরু করে। তারা এও বলে— আমি পশ্চিমা সংস্কৃতি থেকে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুটা বাংলাদেশে আনার চেষ্টা করছি এবং এটা বাংলাদেশের আইনের পরিপন্থী। এসব আমেরিকান ধ্যানধারণা। তারপরও আমরা এটা করতে চেয়েছি এবং কর্তৃপক্ষ শুরুতে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা জানালেও পরে শিক্ষার্থী এবং হোচিমিনের নিরাপত্তার কথা ভেবে তারা সেটা করতে পারলেন না। আমরা এমন পরিস্থিতি আশা করিনি।’

তিনি বলেন, ‘এই উইমেন্স কার্নিভালের জন্য নর্থ সাউথ তাদের ভেন্যুটা ব্যবহার করতে দিয়েছে। পরে পরিস্থিতি দেখে হোচিমিন সিদ্ধান্ত নেন যে, এত বিরোধিতার মধ্যে এখানে যাওয়া ঠিক হবে না।’

কার্নিভালে না যেতে পারার প্রসঙ্গে হোচিমিন ইসলাম বলেন, ‘আমাকে তো ধর্মের দোহাই দিয়ে ঢুকতেই দিলো না, কথাটাই শুনলো না। আগে শুনতো, তারপর বিরোধিতা করতো। তারা ধর্মের দোহাই দিলো। অথচ ওখানে অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন গেলেন। চিরকুট ব্যান্ডের সুমী গেলেন। আমিতো অধিকার নিয়ে কথা বলি। আমি সমকামিতাকে প্রমোট করছি না। ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার নিয়ে কথা বলি। আমার কথা শুনেই না হয় বিরোধিতা করতো।’

 

এ প্রসঙ্গে নারী অধিকারকর্মী ফারহানা হাফিজ তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘নর্থ সাউথ কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি আমি আয়োজকদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে চাই। যেকোনও পাবলিক পরিসরে যেকোনও লিঙ্গ বৈশিষ্ট্যের মানুষের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ বাংলাদেশের সংবিধানের পরিপন্থী।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য একটি ভিন্ন খসড়া আইন যেখানে প্রক্রিয়াধীন, সেখানে নর্থ সাউথ কর্তৃপক্ষ বা আয়োজকরা শিক্ষার্থীদের অসংবেদনশীল ও অসহযোগিতামূলক আচরণের দোহাই দিয়ে হোচিমিন বা যেকোনও ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির প্রবেশাধিকার বন্ধ রাখার এখতিয়ার রাখে না।’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুলে ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, তবে তিনি সাড়া দেননি।


Link copied