মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে বাংলাদেশকে জবাবদিহিতায় আনার আহ্বান এমনেস্টির

Anweshan Desk

Forhad Hossain Fahad

১২ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:০২ পিএম


মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে বাংলাদেশকে জবাবদিহিতায় আনার আহ্বান এমনেস্টির

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মানবাধিকার পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হওয়ায় কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহিতায় আনতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে জাতিসংঘের ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউকে (ইউপিআর) ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। 

শনিবার নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়। দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক এ সংগঠনের ডেপুটি আঞ্চলিক পরিচালক লিভিয়া সাক্কারদি বলেছেন, বাংলাদেশের চতুর্থ ইউপিআর এমন এক সময়ে হতে যাচ্ছে যখন মানবাধিকার এবং গুরুত্বপূর্ণ সমালোচনাকারী প্রতিষ্ঠান, বিরোধী দলীয় নেতা, নিরপেক্ষ মিডিয়া হাউস এবং নাগরিক সমাজ সরকারের পরিকল্পিত আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এই মূল্যায়ন বাংলাদেশের মানবাধিকার রেকর্ড যাচাই এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা ও প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের জন্য কর্তৃপক্ষকে যাচাই করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।

ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রতি চার বছরে একবার জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্রের মানবাধিকার রেকর্ড রিভিউয়ের সুযোগ এনে দেয় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ইউপিআর। এর আগে ইউপিআরে বাংলাদেশের সামনে যেসব সুপারিশ দেয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়নে ইউপিআরে মূল্যায়ন জমা দিয়েছে অ্যামনেস্টি। তাতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশ ও শান্তিপূর্ণ সভাসমাবেশ, অন্যান্য মানবাধিকার- যেমন জোরপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সংখ্যালঘুদের অধিকার, মৃত্যুদণ্ড ও শরণার্থীদের অধিকারের বিষয়ে উদ্বেগ তুলে ধরা হয়েছে।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ে অ্যামনেস্টি বলেছে, এর আগে ২০১৮ সালের মে মাসে বাংলাদেশের শেষ ইউপিআর পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত রাখার সুপারিশ সরকার মেনে নিয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে অধিকারকে ক্ষুন্ন করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে বেপরোয়াভাবে আইনের সংস্কার এবং বিভিন্ন আইনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার। নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩-এ রয়ে গেছে বহুল বিতর্কিত সাবেক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেক বিষয়।

অ্যামনেস্টি আরও বলেছে, বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩’কে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করতে হবে এবং এই আইন যে মানবাধিকারের পক্ষের ব্যক্তি, অধিকারকর্মী, সমালোচক, শান্তিপূর্ণভাবে ভিন্নমতের ব্যক্তিদের টার্গেট করতে ব্যবহার না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সভা সমাবেশের মতো শান্তিপূর্ণভাবে মানবাধিকার চর্চার জন্য যাদেরকে আটক করা হয়েছে, তাদেরকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।এতে জোরপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে বলা হয়, যদিও গত ইউপিআরে বাংলাদেশ সরকার এসব বিষয় প্রতিরোধ এবং এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার সুপারিশ সমর্থন করেছিল, তবুও গত পাঁচ বছরে উদ্বেগজনকভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও জোরপূর্বক গুম দেখা গেছে। ওই সময় থেকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আইন রক্ষাকারীদের হাতে সংঘটিত বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পর জোরপূর্বক গুমের একটি পরিষ্কার প্যাটার্ন অনুসন্ধান করে তা প্রামাণ্য আকারে উপস্থাপন করে।

শান্তিপূর্ণ সভাসমাবেশ বিষয়ে অ্যামনেস্টি বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, স্কুলের শিক্ষার্থী, শ্রমিক এবং রাজনৈতিক কর্মীদের আয়োজনে নাগরিক বিভিন্ন ইস্যুতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে নিপীড়ন চালিয়েছে পুলিশ। এসব ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করেছে কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট, লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী শক্তি। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই দ্রুততার সঙ্গে, পূর্ণাঙ্গভাবে, পক্ষপাতিত্বহীন, কার্যকর এবং স্বচ্ছ তদন্ত করতে হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এ জন্য যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এর মধ্যে এসব ঘটনায় কমান্ডের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকেও রাখতে হবে। খেয়ালখুশিমতো যাদেরকে গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়েছে তাদের সবাইকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ ইউনাইটেড ন্যাশনস হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) ইউপিআর প্রতি চার বছরে একবার হয়। এই ইউপিআরে সব সদস্য রাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। সেক্ষেত্রে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের জমা দেওয়া তথ্য পর্যালোচনায় গুরুত্ব পায়।


Link copied