মধুপুরে আদিবাসীদের ভোগ দখলে থাকা জমি চাষে বাঁধা, গুলি করে হত্যার হুমকি বনবিভাগের
০৭ জুলাই ২০২২, ০২:৪৯ এএম
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় শত শত বছর ধরে ভোগ দখলে থাকা আদিবাসীদের জমি চাষাবাদে বাঁধা ও গুলি করে হত্যা করার হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। খবর আইপি নিউজের।
বুধবার (৬ই জুলাই) দুপুরে মধুপুরের আমতলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের কৌশলা নকরেক ও তাঁর পরিবার নিজ আবাদী কৃষি জমিতে আমন ধান রোপনের উদ্দেশ্যে জমি চাষ করতে গেলে টাঙ্গাইল বনবিভাগের দোখলা রেঞ্জ কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে বন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাঁদের জমি চাষের বাঁধা দেয় এবং বন বিভাগের নিষেধ অমান্য করলে গুলি হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক আদিবাসী যুবক হুমকি দেওয়ার এই দৃশ্য ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় এবং ঐ ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় অনেক অনেক মানুষের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে গুলি করার হুমকি দিচ্ছে এক রেঞ্জ কর্মকর্তা। স্থানীয়রাও তাঁকে সমর্থন করে গুলি করতে উৎসাহিত করছেন।
এ বিষয়ে গারো সম্প্রদায়ের পলান্ত চিরান বলেন, ‘চাষে বাধা দিলে, আমি প্রতিবাদ জানাই; পরে পুলিশ এনে আমাকে গুলি করে মারতে চেয়েছে।’
ভুক্তভোগী কৌশলা নকরেক বলেন, ‘বংশপরম্পরায় আমরা এ জমিতে চাষ করে আসছি। চাষ করতে না দিলে আমরা কি খাবো? গুলিতে মরতে ভয় পাই না, এমনিতেও না খেয়ে মরে যাবো।’
জানা গেছে, কৌশলা নকরেক উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ২ পাকি জমিতে চাষ করে কোনরকমে সংসার চালান। পাশের জমি বাকি ৩ ভাইয়ের। সকালে চার ভাই-বোন মিলে হাল চাষ করতে গেলে বাধা ও গুলি করে হত্যার হুমকি দেয় বনবিভাগ। এতে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
বাগাছাস মধুপুর শাখা সভাপতি নিউটন মাঝি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে বলছেন এক ইঞ্চি জমি যাতে অনাবাদি না থাকে। সেখানে আবাদি জমিতে জোরপূর্বক খাল খনন করতে চায় বনবিভাগ।’
এ ঘটনার পর আদিবাসী একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ জানানোর চেষ্টা করলে, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ বিষয়ে বাগাছাস কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জন জেত্রা বলেন, ‘রেঞ্জ কর্মকর্তা গুলি করার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে ১ ভ্যান পুলিশ আসে এবং জমি চাষ বন্ধ করার অনুরোধ জানান।’
তিনি আরও বলেন, ‘রেঞ্জ কর্মকর্তা আইন লঙ্ঘন করেছেন। তাঁর উপযুক্ত বিচার না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
উল্লেখ্য, বংশপরম্পরায় মধুপুর বনের ভিতরের জমি চাষবাস করে আসছেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা। কাগজপত্র না থাকলেও এ জমির উপর তাদের ঐতিহ্যগত অধিকার রয়েছে। কিন্তু ‘ইকো ট্যুরিজম উন্নয়ন ও টেকসই ব্যবস্থাপনা'র নামে বন বিভাগ আদিবাসীদের ভোগদখলে থাকা এসব জমি রাষ্ট্রীয় দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে। আদিবাসী অধিকার কর্মী ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার দাবি সত্ত্বেও সরকার আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না।