বলাৎকারের অপমান সইতে না পেরে মাদ্রাসা ছাত্রের আত্মহত্যা

Anweshan Desk

Anweshan Desk

০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ২২:৩৫ পিএম


বলাৎকারের অপমান সইতে না পেরে মাদ্রাসা ছাত্রের আত্মহত্যা

রাজধানীর কামরাঙ্গীচরে শরিফুল ইসলাম (১৪) নামক এক মাদরাসা ছাত্রের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। হাফেজি মাদ্রাসায় পড়ুয়া ওই ছাত্র বলৎকারের শিকার হয়ে  আত্মহত্যা করেছে বলে জানা গেছে। মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে দেখা যায় যে শরিফুল ইসলামের মলদ্বার অস্বাভাবিক। মলদ্বার দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সে মলদ্বার দিয়ে ইতিপূর্বে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলো। তবে বিষয়টি কাউকে বলতে না পেরে নিজের উপর অভিমান করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে সে।

১৪ বছর বয়সী এই শিশু কামরাঙ্গীর চরে নূরিয়া মাদ্রাসায় হাফেজি পড়ত, সেখানেই থাকত। গত শুক্রবার হাফেজি শেষ করে পাগড়ি পায় সে। এরপর ছুটি পেয়ে ওইদিনই পূর্ব রসুলপুরের বাসায় ফেরে।

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার হাজী আমির হোসেনের ছেলে শরিফুল। কামরাঙ্গীরচর পূর্ব রসুলপুর ৯ নম্বর গলির ৬/এ নম্বর ৯ তলা বাড়ির ষষ্ঠ তলায় পরিবারের সাথে থাকতো সে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট শরিফুল।

মৃত শরিফুলের বড় ভাই শাহিন হাসান জানান, গত শুক্রবার সে হাফেজী সম্পন্ন করে এবং  ওই রাতেই সে বাড়িতে আসে। এরপর সব কিছু স্বাভাবিক চলছিলো। সোমবার বিকেলে তার বাবা তাকে আবার মাদ্রাসায় যাওয়ার জন্য বললে তখন শরিফুল তাকে জানায়, আজ মঙ্গলবার মাদ্রাসায় যাবে সে। এরপর রাত দশটার দিকে রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও দরজা না খোলায় তাদের সন্দেহ হলে তাকে ডাকাডাকি শুরু করেন। পরবর্তীতে রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখেন ফ্যানের সাথে ওড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছে সে। তখন তারা তাকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নিচে নামায়।

তিনি আরও বলেন, অভিমান করে তার ছোট ভাই আত্মহত্যা করতে পারে– তেমন কোনো ঘটনা তাদের পরিবারে ঘটেনি।

এদিকে, কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “বাসার সবার সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক ছিল তার। সোমবার তার মাদ্রাসায় ফেরার কথা ছিল। তবে সেদিন সে তার বাবাকে জানায়, সে আরও একদিন বাসায় থাকবে। সোমবার রাতে সে তার দাদার হাত-পা ধুইয়ে দেয়। এরপর পাশের ঘরে ঢুকে সিটকিনি আটকে দেয়।

“পরিবারের লোকেরা ভেবেছে হয়ত সে মায়ের মোবাইল নিয়ে গেমস খেলছে। অনেকক্ষণ দরজা না খোলায় তারা কাঠের দরজার নিচের ফাঁকা দিয়ে ভিডিও অন করে একটি মোবাইল ঢুকিয়ে দেয়। পরে সুতা দিয়ে মোবাইল টান দিয়ে বাইরে এনে দেখে ফ্যানের সঙ্গে মায়ের ওড়না দিয়ে ঝুলছে ছেলেটি।”

পরে থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ গিয়ে শিশুটিকে নামিয়ে হাসপাতালে নেয়। লাশের সুরতহাল করার সময় পায়ুপথে ‘অস্বাভাবিকতা’ দেখে পুলিশের ধারণা হয়, শিশুটি যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। 

যৌন নিপীড়নের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে ওসি বলেন, “আমরা সুরতহালে যা পেয়েছি তা উল্লেখ করেছি। আরও কনফার্ম হওয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেলে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। আমরা আপাতত একটা অপমৃত্যুর মামলা নিয়েছি। কোন প্রকার নিপীড়নের শিকার হয়েছে এমন তথ্য-প্রমাণ পেলে পরবর্তীতে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সুরতহাল প্রতিবেদনের যে ছকে যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষণের লক্ষণের বর্ণনা করতে বলা হয়, সেখানে প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী এসআই আশরাফুল হক লিখেছেন, “তার মলদ্বার দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায় যে ভিকটিম ইতিপূর্বে মলদ্বার দিয়ে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। কাউকে কিছু বলতে না পারায় নিজের সাথে অভিমান করে সে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে।”

এছাড়াও আর অন্য কোনো কারণ রয়েছে কিনা তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বলা যাবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।


Link copied