পাশাপাশি মন্দির মসজিদ : সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

Anweshan Desk

Anweshan Desk

০৫ অক্টোবর ২০২২, ১২:৪১ পিএম


পাশাপাশি মন্দির মসজিদ : সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

বামে ভূঁয়াই বাজার সর্বজনীন দুর্গা মন্দির এবং ডানে ভূঁয়াই বাজার জামে মসজিদ

 

একপাশে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মসজিদ, নামাজ পড়ছেন মুসল্লীরা। অপরপাশে পূজামন্ডপ, চলছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। যার যার ধর্ম সে সে পালন করছে। এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নে উপাসনালয় দুটির অবস্থান। ওই ইউনিয়নের জুড়ী-কুলাউড়া সড়কের ভূঁয়াই বাজার এলাকায় এক পাশে ‘ভূঁয়াই বাজার জামে মসজিদ’। এর মাত্র ৩০-৪০ ফুট দূরে ‘ভূঁয়াই বাজার সর্বজনীন দুর্গা মন্দির’।

প্রথম আলোর বরাতে জানা যায়, ১৯৭৩ সালে এলাকাবাসীর উদ্যোগে একই সঙ্গে এবং পাশাপাশি নির্মাণ করা হয় মসজিদ ও মন্দির। আজান শুনে এলাকার মুসল্লিরা নামাজ পড়তে আসেন মসজিদে। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের পূজা–অর্চনা চলে পাশের মন্দিরে। পাঁচ দশকে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন নিয়ে কখনো বিরোধ হয়নি। বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সাক্ষী হয়ে পাশাপাশি আছে মসজিদ ও মন্দির দুটি।

একই সঙ্গে মসজিদ ও মন্দির নির্মাণের সাক্ষী স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি মাখন মিয়া। এমন বিরল ঘটনা দেশের আর কোথাও নেই দাবি করে তিনি প্রথম আলোর বরাতে বলেন, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর ভূঁয়াই বাজার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন এলাকাবাসী। এ সময় মসজিদ ও মন্দিরের জন্য পাশাপাশি সাত শতক করে জমি রাখা হয়। ১৯৭৩ সালের দিকে ওই জমিতে বাঁশের খুঁটির ওপর ছনের চালা দিয়ে দুটি স্থাপনা গড়ে ওঠে। এরপর পাকা স্থাপনা নির্মিত হয়।

গত সোমবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরে শারদীয় দুর্গোৎসবের মহা অষ্টমীর পূজা চলছে। পাকা সড়ক থেকে মন্দিরে প্রবেশের রাস্তায় তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। আলোকসজ্জায় ঝলমল করছে মন্দির এলাকা। বসেছে মেলাও। হিন্দুধর্মাবলম্বীরা লাইন ধরে মন্দিরে আসছেন। ওই সময় মাগরিবের আজান হওয়ায় মুসল্লিরা নামাজ পড়তে মসজিদে যাচ্ছিলেন। নামাজের সময় বন্ধ রাখা হয় মন্দিরের মাইক।

জানতে চাইলে মন্দির কমিটির সভাপতি পীযূষ কান্তি দাশ প্রথম আলোর বরাতে বলেন, ‘প্রায় ৫০ বছর আগে ১৯৭৩ সালে এলাকাবাসীর উদ্যোগে একই সঙ্গে মসজিদ ও মন্দির নির্মাণ করা হয়। এ রকম পাশাপাশি মসজিদ-মন্দির আর কোথাও আছে কি না, জানা নেই। এখানকার হিন্দু-মুসলমানরা মিলেমিশে আছি। মন্দিরে পূজার সময় মুসলমান ভাইদের নিমন্ত্রণ করি, তাঁরা আসেন, নানাভাবে সহযোগিতাও করেন। ধর্মীয় অনুষ্ঠান করা নিয়ে আমাদের মধ্যে কখনো বিরোধ বা সংঘাত হয়নি।’

শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে মন্দির পরিদর্শনে এসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। তিনি বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের এটা উজ্জ্বল নিদর্শন বলে মনে করি। এখানকার মানুষের সম্প্রীতিতে মুগ্ধ হয়েছি।’

মসজিদে নামাজ পড়ে বেরোনোর পথে কথা হয় মুসল্লি ছমর আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মন্দিরে পূজা চলে। মসজিদে নামাজ আদায় করি আমরা। এতে কারও কোনো সমস্যা হয় না। এইটা আমাদের বহু দিনের ঐতিহ্য।’

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোনিয়া সুলতানা বলেন, ভূঁয়াই বাজার ধর্মীয় সম্প্রীতির সাক্ষী হয়ে আছে। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হবে। মানুষে-মানুষে ভাতৃত্ববোধ ও সম্প্রীতি অটুট থাকুক।


Link copied