দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হিন্দু ধর্মালম্বী নৈশ প্রহরীর মৃত্যু
১১ জুলাই ২০২২, ১৭:৪৯ পিএম
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের ব্যক্তি মালিকানাধীন দলই চা বাগানের মূল কার্যালয়ে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হিন্দু ধর্মালম্বী নৈশ প্রহরী প্রসাদ পাশি ১৪ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মারা গেছেন।
১০ জুলাই রোববার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। রোববার রাতে কারখানায় প্রসাদ পাশির লাশ রেখে বাগানের বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
জানা গেছে, ২৮ জুন দিবাগত রাতে দলইটা বাগানের অফিস কক্ষে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে দগ্ধ হন নৈশ প্রহরী শ্রী প্রসাদ পাশি। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সিলেট রাগিব রাবিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। সেখানে ১৪ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে রোববার (১০ জুলাই) ভোরে শ্রী প্রসাদ মারা যায়।
রাতে শ্রী প্রসাদের মরদেহ চা বাগানে পৌঁছালে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে সাধারণ চা শ্রমিকরা। এ সময় তারা বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে নিহত পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণসহ ৬ দফা দাবি উত্থাপন করে। দাবি না মানা পর্যন্ত মরদেহ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। সোমবার বিকালে দাবি মেনে নেওয়ার পর শ্রমিকরা শান্ত হয়।
খবর পেয়ে সোমবার (১১ জুলাই) সকালে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত উদ্দিন, কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়ারদৌস হাসান, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরী, মাধবপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আসিদ আলি, সাবেক চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় চা শ্রমিক ইউনিয়ন এর সহ-সভাপতি পংকজ কুণ্ডু, কোষাধ্যক্ষ পরেশ কালিঞ্জি, ভ্যালী সভাপতি ধনা বাউরী, সম্পাদক নির্মল পানিকা, বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি কিশোন পাশী ঘটনাস্থলে যান। পরে তারা দলই চা বাগানের ডেপুটি ম্যানেজার মহসিন পাটুয়ারী, ব্যবস্থাপক আলি আজগরসহ বাগান কর্তৃপক্ষ চা কারখানার সামনে আলোচনা সভায় বসেন।
এ সময় চা শ্রমিকের পক্ষ থেকে নিহত প্রসাদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে দশ লাখ টাকা, বাগানে স্থায়ী নাম অন্তর্ভুক্তকরণ সৎকাজ করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ, দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় নিহত প্রসাদের নামকরণে কারখানা সম্মুখে স্মৃতিসৌধ স্থাপন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান, কোনো নিরীহ চা শ্রমিকদের হয়রানির শিকার না করাসহ ৬টি দাবি উপস্থাপন করা হয়। শ্রমআইনে ক্ষতিপূরণসহ প্রাথমিক দাবি-দাওয়া কর্তৃপক্ষ মেনে নেয়ায় বিকাল সাড়ে ৩টায় কারখানার সামনে থেকে শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের জন প্রসাদের মরদেহ শ্রমিক লাইনে তার বাড়িতে নেয়া হয়।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়ারদৌস হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষে করা দাবি বাগান কর্তৃপক্ষ মেনে নিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ ঘটনায় যারা জড়িতদের খুঁজছে পুলিশ।