যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর মরদেহকে কেন্দ্র করে শাহবাগে জামাতের তাণ্ডব
১৫ অগাস্ট ২০২৩, ১৮:০৮ পিএম

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মরদেহকে ঢাকা থেকে পিরোজপুর নেয়াকে কেন্দ্র করে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় চত্তর ও শাহবাগ এলাকায় সোমবার রাত থেকে শুরু করে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত নানা উত্তেজনা চলেছে। এ পর্যায়ে পুলিশ শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে জামায়াত ইসলামী ও দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর সমর্থকদের সরিয়ে দেয়।
সোমবার ভোররাতে পুলিশের লাশবাহী গাড়িতে করে মি. সাইদীর মরদেহ বের করে নেয়ার সময় জামায়াত সমর্থকরা গাড়ি আটকালে পুলিশের সাথে সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সোমবার রাতে দেলাওয়ার হোসেন সাইদীর মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হওয়ার আগে থেকেই শাহাবাগের বিএসএমএমইউ হাসপাতালের বাইরে জামায়াতে ইসলামীর শতশত সমর্থক জড়ো হতে থাকেন।
এর কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ হাসপাতালের বাইরে থেকে হাসপাতাল প্রাঙ্গনে টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। হাসপাতালের ভেতরে থাকা জামায়াত সমর্থকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে পুলিশ ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাম্বুলেন্সটি বাইরে নিয়ে আসে ও আরেকটি অ্যাম্বুলেন্সে মি. সাইদীর মরদেহ স্থানান্তর করে।
সে সময় ছত্রভঙ্গ জামায়াত সমর্থকরা হাসপাতালের বাইরে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং রাস্তায় থাকা কয়েকটি মোটর সাইকেলে আগুন দেয়। পুলিশের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে জামায়াত সমর্থকরা সাইদীকে বহন করা গাড়ির কাঁচ ভেঙে দেয় ও চাকা নষ্ট করে দেয়।
মঙ্গলবার সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার বলেন, "কাল সারা রাতে তার মরদেহ হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির ও তার স্বজনরা নাটক করেছে এবং তাণ্ডব চালিয়েছে।”
সাঈদীর মৃত্যুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তার দুই ছেলেকে জানায়। পরে তার দুই ছেলে মরদেহ পিরোজপুরে তাদের গ্রামের বাড়িতে নেওয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে।
এর মধ্যে কারা কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী মরদেহের ময়নাতদন্ত করার প্রস্তুতি নেয়। ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়ে আসা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট এসে মরদেহের সুরতহাল করেন। যখন ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে নিয়ে যাওয়া হবে, সেই মুহূর্তে সাঈদীর ছেলেরা জোর দাবি জানান যে তারা ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ নিয়ে যেতে চান।
বিষয়টি নিয়ে অনেক সময় ক্ষেপণ হয় এবং রাত দেড়টার দিকে সাঈদীর ছেলেরা কারা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পায়। মরদেহের গোসল শেষে পরিবারের সদস্যরা পিরোজপুরে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন।
পুলিশ কমিশনার বলেন, “তখন বিএসএমএমইউ ও শাহবাগে অবস্থান নেওয়া কয়েক হাজার জামায়াত-শিবির কর্মী দাবি তোলে যে তারা জানাজা পড়ে তারপর মরদেহ নিতে চায়। তখন আমরা তাদের বলি, আপনারা এখানে জানাজা পড়তে পারেন, কারণ আগামীকাল জাতীয় শোক দিবস, আমাদের ব্যস্ততা আছে, আপনারা এখন জানাজা পড়ে মরদেহ নিয়ে যেতে পারেন।
“রাত সোয়া ২টার দিকে তারা জানাজার পরিবর্তে মোনাজাত করে আধা ঘণ্টা। তারা বলে, ‘আমরা জানাজা পড়ব না মোনাজাত করেছি, পরে আমরা গায়েবানা জানাজা পড়ব’। এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা মোনাজাত করে।”
পুলিশ কমিশনার বলেন, “যখন মরদেহ গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়, তখন হাজার হাজার জামায়াত-শিবির লাশবাহী গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। তারা কোনো মতে এই মরদেহ পিরোজপুরে নিয়ে যেতে দেবে না। এসময় লাশবাহী গাড়ির সঙ্গে থাকা পুলিশ অফিসার ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে জামায়াত-শিবির। সঙ্গে তারা গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে।
“এই হামলায় ডিসি রমনাসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র অফিসার আহত হন। তারা পুলিশের চার থেকে পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং দুটি মোটরসাইকেল আগুন ধরিয়ে দেয়।”
তিনি বলেন, “আমরা ধৈর্য্য সহকারে এই তাণ্ডব সহ্য করি যে তারা একটা মরদেহ নিয়ে যেতে চাচ্ছে নিয়ে যাক। তারপরেও আমরা কোনো শক্তি প্রয়োগ করিনি। ফজরের নামাজের পরে তাদের আবারও অনুমতি দেওয়া হল জানাজা পড়ার। কিন্তু ফজরের নামাজের পরে তারা আমাদের অফিসারদের বের করে বিএসএমএমইউ দখলে নিয়ে নিল। তারা মরদেহ পিরোজপুর নিতে দেবে না।
“এর মধ্যে তারা ফেইসবুকে প্রচার করতে শুরু করল সারা দেশ থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের শাহবাগে আসার জন্য। তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় তাদের ওপরে আমরা অত্যন্ত সীমিত আকারে শক্তি প্রয়োগ করি। আমরা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে বিএসএমএমইউ মুক্ত করে সাঈদীর মরদেহ পিরোজপুরে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।”
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, “আমারা গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছিলাম যে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা জড়ো হচ্ছেন। সাঈদীর দুই ছেলে প্রথম থেকে আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন, তাদের বাবার মরদেহ তারা নিয়ে যাবেন, কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।
“আমরা তাদের ওপর বিশ্বাস করে প্রথম থেকে কোনো প্রকার শক্তি প্রয়োগ করি নাই। যেহেতু তারা তাদের নেতার মরদহ নিয়ে যাওয়ার জন্য কেউবা মৃত্যুর সংবাদ শুনে আবার অনেকে মরদেহ দেখার জন্য এসেছেন, তাই মানবিক কারণে আমরা প্রথম থেকে কোনো ধরনের অ্যাকশন নেই নাই।
“কিন্তু জামায়াত-শিবির যে তাদের চরিত্রটা পাল্টায় নাই, এটা তারা আবারও প্রমাণ করল। বিগত ২০১২-১৩ সালে তারা যেভাবে পুলিশকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা, হেলমেট দিয়ে পিটিয়ে পুলিশের মাথা থেঁতলে দেওয়ার মত ঘটনা ঘটিয়েছে, সেই চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ তারা আবারও করল।”