১৬ বছরে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অবৈধভাবে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে
১৩ অগাস্ট ২০২৩, ২১:০১ পিএম
বিগত ১৬ বছরে সরকারি মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে ১০ বার। এতে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে অবৈধ উপায়ে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি করিয়ে শত কোটি টাকা আয় করেছে কয়েকটি চক্র। এর মধ্যে সাত চিকিৎসকসহ প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
রোববার (১৩ আগস্ট) দুপুর ১২টায় মালিবাগে সিআইডি সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া।
তিনি বলেন, পাবলিক পরীক্ষা এলেই এক শ্রেণির চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। সিআইডির তদন্তে বিগত ১৬ বছরে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে অবৈধ উপায়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়ে শত কোটি টাকা আয়ের প্রমাণ মিলেছে। এই চক্রের সদস্য ৮০ জন হলেও ৭ জন চিকিৎসকসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
চিকিৎসকরা হলেন, মেডিকেল প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম হোতা ও ফেইম কোচিং সেন্টারের ডা. ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধান (৫০), জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ও ডা. ময়েজের স্ত্রী ডা. সোহেলী জামান (৪০), প্রাইম কোচিং সেন্টারের মালিক ও ঢাকা ডেন্টাল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ডা. মো. আবু রায়হান, চক্রের অন্যতম হোতা ও থ্রি ডক্টরস কোচিংয়ের ডা. জেড এম সালেহীন শোভন (৪৮), মেডিকো কোচিং সেন্টারের মালিক ডা. মো. জোবাইদুর রহমান জনি (৩৮), জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) চিকিৎসক ও প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্য ডা. জিল্লুর হাসান রনি (৩৭) ও ময়মনসিংহের বেসরকারি কমিউনিটি ব্যাজেড মেডিকেল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ডা. ইমরুল কায়েস (৩২)।
দেখা যায়, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা ভালো দেওয়ার পরও চান্স না হওয়ায় কান্না কাটি করে। প্রশ্নফাঁস হওয়ার কারণেই এসব মেধাবী শিক্ষার্থী বঞ্চিত হয়েছেন।
ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্র পেয়ে যারা চিকিৎসক হয়েছেন বা বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে পড়ছেন তাদের অনেককেই চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগিরই তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সিআইডি।
আগামী ১৭ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা। সারা দেশের প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নেবেন। পাবলিক পরীক্ষা এলেই এক শ্রেণির চক্র বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই চক্র নানা কায়দায় প্রশ্নফাঁস করে এবং গুজব ছড়িয়ে পরিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিভ্রান্তও করে। সারা দেশে প্রশ্নফাঁস বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে সিআইডির বিশেষায়িত একাধিক দল কাজ করছে।
এরই ধারাবাহিকতায় দেশের মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে নিয়মিত প্রশ্নফাঁসকারী বিশাল এক সিন্ডিকেটের খোঁজ পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ। বিগত এক মাসে ঢাকা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল জেলায় অভিযান পরিচালনা করে এ চক্রটির ১২ সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় সিআইডির সাইবার টিম। গ্রেফতারকৃত ১২ জনের মধ্যে ৭ জনই ডাক্তার।
সিআইডি প্রধান বলেন, তাদের প্রায় সবাই বিভিন্ন মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার, নয়তো প্রাইভেট পড়ানোর আড়ালে প্রশ্নফাঁস করতেন। তাদের ব্যাংক একাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে, যেগুলো মানিলন্ডারিং মামলায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দেয়া বিপুল সংখ্যক ব্যাংকের চেক এবং এডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। যেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ছাড়াও চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূঁইয়ার কাছ থেকে একটি গোপন ডায়রি উদ্ধার করা হয়, যেখানে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা তার চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নাম রয়েছে। সেসব সদস্যদের ধরতে সিআইডির অভিযান অব্যহত রয়েছে।