রাজনৈতিক বিরোধের জেরে কলেজছাত্র প্রান্ত মিত্রকে কুপিয়ে হত্যা
২৬ জুলাই ২০২৩, ১৩:৩৭ পিএম
ফরিদপুর শহরে প্রান্ত মিত্র (২৩) নামে এক কলেজছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার রাত ২টার দিকে বন্ধুর বোনকে রক্ত দিতে বাসা থেকে বের হন তিনি। এর আধা ঘণ্টা পর শহরের আলীপুর সেতুর উত্তরে সড়কের পাশ থেকে প্রান্তের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রান্ত মিত্র ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে স্নাতক (বোটানি) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে নিয়ে দীপশিখা স্কুলের শিক্ষক বিকাশ মিত্র শহরের ওয়্যারলেস পাড়ার ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তাদের গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর পাচুরিয়ায়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরের অম্বিকাপুর শ্মশানে প্রান্তের সৎকার হয়েছে। নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা এ ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন। ঘটনার পর থেকে প্রান্তর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজন পলাতক।
নিহতের মামাতো ভাই ফরিদপুর শহরের ঈশান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাধব চন্দ্র দাস বলেছেন, সোমবার সকালে আলীপুরের রাসেল স্কয়ারে আওয়ামী লীগের কার্যালয় উদ্বোধনের সময় প্রান্তর সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কয়েক যুবকের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। প্রান্তর বন্ধুদের কাছে জেনেছি– হাতাহাতির সময় ওরা প্রান্তকে হুমকি দিয়ে বলেছিল, ‘আলীপুর গোরস্তানের পাশ দিয়ে বাড়ি যাবি না, গেলে লাশ ফেলে দিব।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রান্ত স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সোমবার ফরিদপুরে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। এতে সভাপতি পদপ্রত্যাশী শহরের ঝিলটুলী মহল্লার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম জনি। প্রান্ত তাঁর অনুসারী হিসেবে মিছিল নিয়ে সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। সম্মেলনে যাওয়ার পথে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কর্মীদের সঙ্গে প্রান্তদের মারামারি হয়। কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকা থেকে এ সম্মেলনে যোগ দিলেও নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। নতুন কমিটির সভাপতি পদপ্রত্যাশী জহিরুল ইসলামসহ ২৩ জন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে।
জহিরুল ইসলাম জনি বলেন, ‘প্রান্তের মৃত্যুকে নিছক ছিনতাইয়ের ঘটনা বলা ঠিক হবে না। তাঁর নিহতের আগে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। এ খুনের পেছনে অন্য উদ্দেশ্য থাকতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করছি।’
প্রান্তের বাবা বিকাশ মিত্র বলেছেন, বোনের জন্য রক্ত লাগবে বলে প্রান্তকে ফোন করে তার বন্ধু হৃদয়। ছেলের বাসায় ফিরতে দেরি দেখে কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। পরে হৃদয়কে ফোন করলে প্রান্ত হাসপাতালে যায়নি বলে সে নিশ্চিত করে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার ভোরে পুলিশের কাছ থেকে ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পাই। আমার ছেলের হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
প্রান্তের বন্ধু মো. হৃদয় জানান, তাঁর বোন ফরিদপুরে ডা. জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সোমবার রাতে রক্তের প্রয়োজন হলে প্রান্তকে ফোন দেন। রাত ২টার দিকে বাসা থেকে বের হওয়ার কথা জানায় প্রান্ত। পরে দেরি দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েন ও বারবার কল দিলেও প্রান্তের নম্বর বন্ধ পান বলে জানান হৃদয়।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার জানিয়েছেন, যেখানে তারা লাশটি পেয়েছেন, সেখানে রক্তের কোনো আলামত পাননি। ছিনতাইকারীদের হাতে নাকি প্রান্তকে কেউ হত্যা করেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কোতোয়ালি থানার এসআই শামিম হোসেন জানান, প্রান্তর বুকের বাঁ পাশে ধারালো অস্ত্রের একাধিক গভীর ক্ষত রয়েছে। ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তে পুলিশের কয়েকটি দল কাজ করছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন।
কোতোয়ালি থানার ওসি এম এ জলিল জানিয়েছেন, প্রান্তর বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। শহরের সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। জড়িতদের শনাক্তে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। সম্ভাব্য সব কারণ বিবেচনায় নিয়ে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
এদিকে, মঙ্গলবার ভোরে শহরের কমলাপুরে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি জাদু মিয়া দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়েছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হঠাৎ ফরিদপুর শহরে অনাকাঙ্ক্ষিত কয়েকটি ঘটনায় আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন বাসিন্দারা।