আরসা কমান্ডার হাফেজ নুর মোহাম্মদসহ ৬ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রেফতার

Anweshan Desk

Anweshan Desk

২৩ জুলাই ২০২৩, ১৪:০২ পিএম


আরসা কমান্ডার হাফেজ নুর মোহাম্মদসহ ৬ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রেফতার

 বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের কাছে মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়েছিল র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই)। গত বছরের ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় ওই অভিযান চলাকালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ডিজিএফআইর স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান রুশদী নিহত হন। ডিজিএফআইর এই কর্মকর্তাকে সরাসরি হত্যায় অংশ নিয়েছিলেন আরসার সামরিক কমান্ডার নুর মোহাম্মদ। ঘটনাস্থলে নিজে উপস্থিত থেকে রুশদীর মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

শুক্রবার রাতে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী নুর মোহাম্মদসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। তারা হলেন মোহাম্মদ হোসেন জোহার, ফারুক ওরফে হারেস, মনির আহাম্মদ, নুর ইসলাম ও মো. ইয়াছিন। তাদের কাছ থেকে একটি ৭.৬৫ এমএম পিস্তল, একটি বিদেশি রিভলবার, একটি শটগান, চারটি দেশীয় এলজি, তিনটি দেশীয় রামদা, গোলাবারুদসহ ৭০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

গতকাল শনিবার কক্সবাজারে সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, আরসার গোপন আস্তানার তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর গহিন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে প্রথমে সংগঠনটির শীর্ষ সন্ত্রাসী ও কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের অন্যতম সামরিক কমান্ডার হাফেজ নুর মোহাম্মদকে আটক করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরসার অপর পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নুর মোহাম্মদের নেতৃত্বে আরসার ৩০ থেকে ৩৫ সদস্য কুতুপালং ক্যাম্প ও এর আশপাশের এলাকায় খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তারা প্রতিবেশী দেশ থেকে দুর্গম সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে অস্ত্র চোরাচালান করত বলে জানা গেছে। হাফেজ নুর মোহাম্মদ তাঁর দলের সদস্যদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের খুন, অপহরণ ও গুমের ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করতেন। চাঁদার অর্থ না পেলে অপহরণ ও শারীরিক নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করা হতো। মুক্তিপণ না পেলে তারা খুন করে গহিন জঙ্গলে লাশ গুম করতেন।

র‍্যাব মুখপাত্র মঈন বলেন, ডিজিএফআই কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত আরসা নেতা নুর মোহাম্মদ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, নুর ২০১৬ সালে আরসার সদস্য আরিফ উদ্দিনের মাধ্যমে সংগঠনটিতে যোগ দেন। নুর কুংফু ও বিস্ফোরক তৈরিতে পারদর্শী। তাঁর নেতৃত্বেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হেডমাঝি শফি উল্লাহ, সালাম, সলিম, মালেক, হাবুইয়া, ইমান, আবুল মুনসুর ও সালেহ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ছাড়া জোরপূর্বক এক নারীর ঘরে প্রবেশের সময় বাধা দিলে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলোচিত ছয়জন হত্যাসহ বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে তাদের সরাসরি জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে। এ ছাড়া হোসেন জোহার হেডমাঝি আবু তালেবকে গুলি করে হত্যা, সাবমাঝি সৈয়দ হোছেনকে গুলি করে চোখ উপড়ে ফেলে হত্যা ও শফিকুর রহমানকে গুলি করে হত্যার প্রধান সহযোগী হিসেবে জড়িত ছিলেন এই আরসা নেতা নুর।

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, ফারুক হারেস আরসার প্রহরী দলের প্রধান সমন্বয়কারী এবং টর্চার সেলের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। তাঁর সাত-আটজনের একটি ‘নেট গ্রুপ’ রয়েছে, যারা নিয়মিত ক্যাম্পের প্রহরীর দায়িত্ব পালন করতেন; আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের কাছে রিপোর্ট দিতেন। মনির আহাম্মদ, নুর ইসলাম ও ইয়াছিন পাহাড়ে অবস্থিত গোপন আরসা ঘাঁটির নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্ব পালন করতেন; যেখানে অপহরণ করে নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায় করা হতো। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আরসার ৪০০ থেকে ৪৫০-এর বেশি সন্ত্রাসী সক্রিয় রয়েছে। তাদের ধরতে ক্যাম্পে র‍্যাবের অভিযান চলমান।

জাতীয় থেকে আরও


Link copied