প্রথম আলোর সেই সাংবাদিককে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায়

Anweshan Desk

Anweshan Desk

২৯ মার্চ ২০২৩, ১২:১৫ পিএম


প্রথম আলোর সেই সাংবাদিককে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায়

সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে তাঁর বাসা থেকে আজ বুধবার ভোর চারটার দিকে সিআইডির পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে। সিআইডির পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা সাধারণ পোশাকে ছিলেন। সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বাসা সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে আমবাগান এলাকায়। তবে স্থানীয় পুলিশ ও সিআইডির ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা এ বিষয়ে কিছু জানেন না।  

উল্লেখ্য, সম্প্রতি প্রথম আলোতে করা তার একটি প্রতিবেদন নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সেই প্রতিবেদনে একটি  পথশিশুর একপাশের ছবি দিয়ে অন্য এক ব্যক্তির বক্তব্যকে হেডলাইন করা হয়েছিলো। অর্থাৎ ছবিটি একটি পথশিশুর কিন্তুু বক্তব্য জাকির হোসেন নামক এক ব্যক্তির বলে পরে প্রথম আলোর দাবি। যেখানে বলা হয়েছিলো " পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কি করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো।"

  যদিও ১৩ মিনিটের মাথায় তারা হেডলাইন পরিবর্তন করে এবং ছবি সরিয়ে নিয়ে তা উল্লেখ করেন, " বক্তব্যের সাথে ছবির অসঙ্গতি থাকা তা সংশোধন করা হয়েছে । 

স্থানীয় এক সাংবাদিকসহ দুজন প্রত্যক্ষদর্শী  বলেন, বুধবার ভোর ৪টার দিকে ৩টি গাড়িতে প্রায় ১৪–১৫ জন শামসুজ্জামানের বাসার সামনে যান। তাঁদের সাত থেকে আটজন বাসায় ঢোকেন। একজন শামসুজ্জামানের থাকার কক্ষ তল্লাশি করে তাঁর ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, দুটি মুঠোফোন ও একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে যান। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ওই ব্যক্তিরা শামসুজ্জামানকে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় যান।

আশুলিয়ায় আমবাগান এলাকার ওই বাড়ির নিচতলায় প্রায় বছরখানেক ধরে ভাড়া থাকতেন শামসুজ্জামান। তাঁর গ্রামের বাড়ির মানিকগঞ্জ জেলার সদর থানা এলাকায়।

ওই বাড়ির মালিক ফেরদৌস আলম কবির বলেন, ‘আমাকে সিআইডির লোকজন এসে জিজ্ঞেস করে যে, এই বাসায় শামসুজ্জামান থাকে কি না? থাকে জানালে তাঁকে নিয়ে যায়। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম কী কারণে নেওয়া হচ্ছে? তখন আমাকে একজন বলেন, কোনো এক রিপোর্টের কারণে তাঁর নামে মামলা হয়েছে। সেই মামলায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমি এর বেশি কিছু বলতে পারব না।

ঘটনার সময় শামসুজ্জামানের বাসায় ছিলেন স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাসায় এসে সিআইডি সদস্যরা একটি ল্যাপটপ, দুটি মুঠোফোন ও একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক জব্দ করেন এবং সেগুলোর তালিকা করেন। শামসুজ্জামানকে জামাকাপড় নিতে বলেন। এ সময় কক্ষের ভেতরে দাঁড় করিয়ে তাঁর (শামসুজ্জামান) ছবি তোলা হয়। ৫ থেকে ৭ মিনিটের মধ্যে তাঁরা বের হয়ে যান। ৩টি গাড়িতে এসেছিলেন সিআইডি সদস্যরা।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, তাঁদের কোনো টিম শামসকে নিয়েছে কী না তিনি এখনও নিশ্চিত নন। খোঁজখবর নিয়ে জানাবেন।

এদিকে প্রথম আলো জানায়, তাদের সঙ্গে দুবার কথা হয় ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামানের। সর্বশেষ সকাল সাড়ে ৮টায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শামসুজ্জামানকে আটক করা হয়েছে—এমন কোনো তথ্য তাঁর কাছে নেই।

আজ সকাল ১০টার দিকে সিআইডির ঢাকা বিভাগের উপমহাপরিদর্শক মো. ইমাম হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, সিআইডির ঢাকা বিভাগ তাঁর দায়িত্বে। তাঁর বিভাগের কেউ শামসুজ্জামানকে আটক করতে যায়নি।

প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গিদের হামলায় নিহত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তৎকালীন সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিমের ছোটভাই।


Link copied