নরসিংদীতে মাদ্রাসার শৌচাগারে ছাত্রীর লাশ : ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা

Anweshan Desk

Anweshan Desk

১৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১৭:৪৪ পিএম


নরসিংদীতে মাদ্রাসার শৌচাগারে ছাত্রীর লাশ : ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা

নরসিংদীতে মহিলা মাদ্রাসার শৌচাগার থেকে মাইশা আক্তার (১০) নামের এক ছাত্রীর লাশ উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে নেই কোন অগ্রগতি। এমনকি  পুলিশ এখনও গ্রেপ্তার করেনি কাউকে।

গত ২ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলার শেখেরচরের কুড়েরপাড়ের জামিয়া কওমিয়া মহিলা মাদ্রাসার শৌচাগারের ভেন্টিলেটরের গ্রিলের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় মাইশার লাশ উদ্ধার করা হয়। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ দ্রুত উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মাইশা আক্তার নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী থানার ভগীরথপুর এলাকার ডাইং শ্রমিক নেছার উদ্দিনের মেয়ে। সে মাদ্রাসায় আবাসিক ছাত্রী হিসেবে মক্তব দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ বলে দাবি করলেও, শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকায় ছাত্রীর স্বজনেরা এটিকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বলছেন। এর দেড় মাস আগে ১৯ অক্টোবর দুপুরে পাঠদান চলাকালে একই কায়দায় মাদ্রাসাটির আরেকটি শৌচাগার থেকে আফরিন আক্তার (১৬) নামের আরেক ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল।

গত মঙ্গলবার নরসিংদী প্রেসক্লাবের  নিহত মাইশার স্বজন, এলাকাবাসী ও সামাজিক সংগঠনের কর্মীরা সুষ্ঠু তদন্ত ও আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এটি আত্মহত্যা নয়, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ১০ বছরের শিশু এত উঁচুতে ওড়না ও গামছা দিয়ে কীভাবে আত্মহত্যা করতে পারে? তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্নই বলে দিচ্ছে, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করেনি পুলিশ। প্রভাবশালীরা বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাচ্ছেন।

মানববন্ধনে মাইশার মা রুমা বেগম বলেন, ‘মেয়ের মৃত্যুর পর এখন পর্যন্ত পুলিশ কিছুই করেনি। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মাধবদী থানায় মামলা করেছিলাম। একজনকেও তারা আটক বা গ্রেপ্তার করেনি, জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, এমনও শুনিনি। তারা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে টাকা খেয়ে নীরবতা অবলম্বন করছে। এর আগে লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ধামাচাপা দিয়েছে, এবারও দিতে চাইছে। অথচ কে বা কারা আমার মেয়েকে হত্যা করেছে, পুলিশ চাইলেই তা বের করে ফেলতে পারে।’

মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রকিবুজ্জামান বলেন, মাদ্রাসার শৌচাগার থেকে মাইশার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা হওয়ার পর থেকেই পুলিশের তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখনো হাতে পাওয়া যায়নি। তাই এটি হত্যা না আত্মহত্যা, সেটা বলা যাচ্ছে না। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরই কাউকে গ্রেপ্তার বা আটকের বিষয়টি আসবে।

পুলিশের নীরবতার বিষয়ে ওসি মো. রকিবুজ্জামান বলেন, এটি সত্য নয়। ঘটনা ঘটলে পরিবার তো কত কিছুই দাবি করে। তারা তো অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছে, নিশ্চিত না হয়ে কি কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়? এই ঘটনায় যদি কারও সম্পৃক্ততা থাকে, তবে অবশ্যই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

জাতীয় থেকে আরও


Link copied