মেরিন ইঞ্জিনিয়ার খুন: গ্রেপ্তারকৃত ছিনতাইকারীর দোষ স্বীকার

Anweshan Desk

Anweshan Desk

০১ নভেম্বর ২০২২, ২৩:৫৩ পিএম


মেরিন ইঞ্জিনিয়ার খুন: গ্রেপ্তারকৃত ছিনতাইকারীর দোষ স্বীকার

ঢাকার ধানমণ্ডি লেকের ধারে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাত হোসেন মজুমদার খুনে জড়িত অভিযোগে এক ছিনতাইকারী তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মোহাম্মদ রাব্বী (১৮) নামে ওই তরুণ পেশাদার ছিনতাইকারী বলে পুলিশের ভাষ্য। তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পরদিন মঙ্গলবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলেও জানান ধানমণ্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া।

গত ২৩ অক্টোবর রাতে ধানমণ্ডি লেকের পাড় থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাতের (৫১) লাশ উদ্ধার করা হয়। ঢাকার কলাবাগান এলাকায় বাসা তার। সমুদ্রগামী জাহাজে কর্মরত শাহাদাত কয়েক মাস আগে বাসায় এসেছিলেন।

সন্ধ্যার পর শাহাদাত লেকপাড়ে হাঁটাহাঁটি করতেন জানিয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. শহিদুল্লাহ সেদিন বলেছিলেন, তিনি ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিলেন বলেই তাদের ধারণা।

শাহাদাতের শরীরে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল।

ধানমণ্ডি থানার ওসি ইকরাম বলেন, সোমবার রাতে কামরাঙ্গীরচর বেড়ীবাঁধ সড়ক থেকে রাব্বীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর মঙ্গলবার এই তরুণ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

রাব্বীর জড়িত থাকার প্রমাণ কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ঘটনার রাতের ভিডিও ফুটেজে শাহাদাতের আশপাশে রাব্বীকে দেখা গেছে। তার সঙ্গে আরও চার-পাঁচজন ছিল।

“রাব্বী প্রথমে ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাতের মুঠোফোন ছিনিয়ে নিতে টানাটানি করে। তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হলে দলের আরেকজন এসে শাহাদাতকে ছুরিকাঘাত করে। তখন তিনি পড়ে গেলে রাব্বী তার মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে দৌড় দেয়।”

এই দলে রাব্বী মূল ব্যক্তি নন বলে ওসি জানান। তিনি বলেন, “ছিনতাইকৃত মালামাল সংরক্ষণ ও বিক্রি এবং কাউকে টার্গেট করলে সেই ব্যক্তিকে ফলো করা ছিল রাব্বীর কাজ।

“রাব্বী একেবারে পেশাদার ছিনতাইকারী। কিন্তু দেখতে বয়স কম মনে হয়। সেই সুযোগটি সে সমসময় নেয়। পুলিশ ধরলেও অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে সে। সে যাদের নাম বলেছে, তারা তার ‘সিনিয়র’।”

দলের অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে বলে জানান তিনি। শাহাদাতের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া কিছু এখনও পাওয়া যায়নি।

ওসি বলেন, “নিহত ইঞ্জিনিয়ারের মানিব্যাগে বেশি টাকা ছিল না, দুই হাজারের মতো টাকা ছিল। আর তার ক্রেডিট কার্ডটি ছিল। তার মানিব্যাগ ও মোবাইলটি উদ্ধার হয়নি। রাব্বী বলেছে, মোবাইলটি তারা বিক্রি করে দিয়েছে। তার তথ্য মোতাবেক সেটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।”

সাধারণ মাদক বা অবৈধ জিনিস উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানায়। কিন্তু এ খুনের আসামি গ্রেপ্তারের পর পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।

কেন- জানতে চাইলে ওসি বলেন, “ওকে (সোমবার) রাতে গ্রেপ্তারের পর তাকে নিয়ে কিছু অভিযান চালানো হয়েছে। নিহত ব্যক্তির ফোন উদ্ধারের চেষ্টা হয়েছে। এরপর সকারে আদালতে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা থাকায় সময়ে কুলিয়ে ওঠা যায়নি।”

এদিকে রাজধানীতে মানুষের সময় কাটানোর মতো স্থানগুলো ছিনতাইকারীর আখড়া হয়ে উঠেছে।

ধানমন্ডি লেকের নিরাপত্তাকর্মী আব্দুল মজিদ জানান, লেকের আশপাশে একটি অপরাধচক্রের আনাগোনা রয়েছে। এরা ভয়ংকর। সুযোগ পেলেই হাটতে আসা লোকজনকে বেকায়দায় ফেলে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।

লেকের আরেক নিরাপত্তাকর্মী মুসলিম মিয়া বলেন, রাতে তিনি রবীন্দ্র সরোবরের পাশের ফুডকোর্টগুলোর নিরাপত্তার দেখভাল থাকেন। অনেক সময় অপরাধীরা সংঘবদ্ধ থাকে। কিছু বললেই হত্যার হুমকি দেয় তাকে।

ধানমণ্ডি লেকের ধারে নিয়মিত হাঁটতে যাওয়া ব্যক্তিরা বলেন, মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত লেকের আশপাশে হাঁটাহাঁটি করে মানুষ। মাঝেমধ্যে তারা ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। লোকজনের কাছ থেকে টাকাসহ মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় অপরাধীরা।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসি আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, লেকের সার্বিক বিষয়ে দেখভাল করে সিটি করপোরেশন। পুলিশ নিরাপত্তার দিকটি দেখাশোনা করে। আমরা চেষ্টা করছি মানুষকে নিরাপত্তা দিতে।

জাতীয় থেকে আরও


Link copied