দুর্গাপূজায় জঙ্গি হামলার আশঙ্কা : বিশেষ সতর্কতা জারি
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২২:৪৪ পিএম
আসন্ন দুর্গাপূজায় দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'আমরা জঙ্গি হামলা প্রতিরোধ করতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কারণ, বেশ কিছু পূজামণ্ডপ ঝুঁকিতে রয়েছে।'
এ সময় কমিশনার বলেন, 'আমাদের কাছে তথ্য আছে, ৫০ যুবক জঙ্গি হামলার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। তারা বিভিন্ন পূজামণ্ডপে হামলার জন্য ট্রেনিংও করছে, এগুলোর ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।'
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, পূজায় কোনও সহিংস ঘটনার আগে গোয়েন্দা তথ্য আমাদের থাকবে।
তিনি বলেন, যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পূজামণ্ডপে আমাদের কন্ট্রোলরুমসহ সব জায়গায় আলাদা ফোর্স মোতায়েন থাকবে। পূজায় কোনও ধরনের নাশকতা যাতে না ঘটে সেই বিষয়ে খেয়াল রেখে আমরা কাজ করছি। তারপরেও কোথাও হামলা হলে সেটি মোকাবিলার জন্য আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে।
রাজধানীতে ২৩৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এরমধ্যে চারটিকে বিশেষ মণ্ডপ হিসেবে ধরেছি। এগুলো হচ্ছে, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ মন্দির, ধানমন্ডি পূজামণ্ডপ ও বনানী সর্বজনীন পূজামণ্ডপ। এ চারটা বিশেষ শ্রেণির মণ্ডপে আমাদের পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। নিরাপত্তার জন্য আর্চওয়ে থেকে শুরু করে সিসিটিভি ক্যামেরাসহ সবকিছু থাকবে।
এছাড়া, ঢাকায় ৫টা বৃহত্তর মন্দির রয়েছে। সেগুলো হলো সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, রমনা কালী মন্দির, উত্তরা সর্বজনীন পূজামণ্ডপ, বসুন্ধরা সর্বজনীন পূজামণ্ডপ এবং কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের পূজামণ্ডপ। এগুলোতেও সিসিটিভিসহ আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
এছাড়া, ২ তারকা চিহ্নিত ৮৬টি পূজামণ্ডপ, এক তারকাবিশিষ্ট ৭৭টি এবং সাধারণ শ্রেণির ৬১টি পূজামণ্ডপ রয়েছে। এসব পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় আমাদের যেমন সাধারণ ফোর্স নিয়োজিত থাকবে, তেমনি আয়োজকদের পক্ষ থেকেও পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন থাকবে।
যেসব পুণ্যার্থী আসবেন তাদের তল্লাশিসহ যেসব জিনিস নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ নিষেধ তারা যেন সেগুলো নিয়ে প্রবেশ করতে না পারে, এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
পূজায় এসে ইভটিজিং, মাদক নিয়ে নাচানাচি প্রতিরোধ এবং সারা শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থাপনা থাকবে। এছাড়া, বিসর্জনের দিন নির্দিষ্ট রুট ব্যবহার করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিসর্জনস্থলে পৌঁছাবে। সুশৃঙ্খলভাবে বিসর্জন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘জঙ্গিরা এখন অনলাইনে সক্রিয় রয়েছে। তারা নানা ধরনের পোস্ট দিচ্ছে। তারা সেলফ রেডিক্যালাইজড হয়ে (লোন উলফ) হামলায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে, অন্যকে উদ্বুদ্ধ করছে। কেউ তাদের পোস্ট দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছে, এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে আমরা অ্যালার্ট আছি।’
উল্লেখ্য, গতবছর বাংলাদেশে দুর্গাপূজা ছিল ভয়াবহ। সাম্প্রদায়িক হামলায় রক্তাক্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। কুমিল্লায় এক পূজা মণ্ডপে কোরান রেখে ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরি করা হয়। এর জেরে বাংলাদেশ জুড়ে সংখ্যালঘু হিন্দুরা আক্রান্ত হন।