ইউরোপের দেশে নেয়ার কথা বলে দুবাই নিয়ে চাওয়া হতো মুক্তিপণ

Anweshan Desk

Anweshan Desk

২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:৩৫ পিএম


ইউরোপের দেশে নেয়ার কথা বলে দুবাই নিয়ে চাওয়া হতো মুক্তিপণ

ইউরোপের দেশ সাইপ্রাসে নেয়ার কথা বলে দুবাইতে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল একটি চক্র। বিদেশে মানব পাচারকারী এই চক্রের মূলহোতাসহ তিনজনকে কুমিল্লায় গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। রবিবার রাতে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার জাঙ্গালিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়। 

চক্রের মূল হোতা কখনো সোহেল মজুমদার, কখনো হাবিবুর রহমান, আবার কখনো আদনান নাম ধারণ করে প্রতারণা করে আসছিল। চক্রটির প্রতারণার শিকার হয়ে বিভিন্ন পেশার অর্ধশতাধিক ভুক্তভোগী বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সোমবার র‌্যাব-কুমিল্লা ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন। 

গ্রেফতাররা হচ্ছে- জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার মাটিয়ারা গ্রামের চক্রের মূল হোতা হাবিবুর রহমান (পাসপোর্টের নাম) ওরফে সোহেল মজুমদার ওরফে আদনান (৩২), একই গ্রামের মো. জাকির হোসেন ও কাজী আবু নোমান ওরফে এজেন্ট নোমান (২৮)। 

জানা গেছে, গত ১০ সেপ্টেম্বর সদর দক্ষিণ উপজেলার ধনাইতরী এলাকার মো. দুলাল র‌্যাবের নিকট অভিযোগ করেন, প্রথমে সাইপ্রাস ও পরে খুব সহজেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে টাকা উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে তার ছোট ভাই সাইফুলকে বিদেশে নেওয়ার প্রস্তাব দেয় জাকির। সেই প্রলোভনে ফেলে সাইফুলের পাসপোর্ট হাতিয়ে নেয় চক্রটি। পরে ভিসার প্রসেসিং বাবদ তারা দুই লাখ টাকাও নেয়।

একপর্যায়ে বিমানের টিকেট বাবদ আরও সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা নেওয়ার পর নানা অজুহাতে বিদেশ না নিয়ে টালবাহানা শুরু করে। এভাবে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর চলতি বছরের ১ জানুয়ারি আসামিরা মো. সাইফুলকে সাইপ্রাস নিয়ে যাওয়ার কথা বলে দুবাই নিয়ে যায় এবং সেখানে নিয়ে একটি রুমে তাকে আটকে রাখে। এ সময় চক্রটি সাইফুলের ভাই দুলালকে জানায়, এক মাসের মধ্যে তাকে সাইপ্রাসের ভিসা করে দুবাই থেকে সাইপ্রাসে নিয়ে যাবে। কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও আসামিরা সাইফুলকে সাইপ্রাস না নিয়ে তার ভাই দুলালের নিকট আরও চার লাখ টাকা দাবি করে। এতে দুলাল তার ভাইয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে তাদের দাবিকৃত টাকা প্রদান করে। পরে তারা সাইফুলকে সাইপ্রাসে না দিয়ে আরও ৩ লাখ টাকা দাবি করে। এ ঘটনায় গত ১০ সেপ্টেম্বর সাইফুলের ভাই দুলাল র‌্যাব অফিসে অভিযোগ করে। 

র‌্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লার অধিনায়ক মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর র‌্যাবের একাধিক টিম তদন্তে মাঠে নামে এবং বেরিয়ে আসে প্রতারক চক্রের চাঞ্চল্যকর তথ্য। চক্রটি প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। অবৈধপথে ইউরোপে মানব পাচারে যত রকম জালিয়াতি করা যায় তার সবই তারা করতো। ২০১৯ সালে সাইপ্রাস সরকার আসামি হাবিবুর রহমানকে তালিকাভুক্ত অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে এবং তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া নথিপত্র, প্রতারণা ও মানি লন্ডারিং আইনে ৮টি অভিযোগ ইস্যু করে। চক্রটি এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে অর্ধশতাধিক বিভিন্ন পেশার লোকজনকে বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে। এই চক্রটির কারণে অনেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। গ্রেফতারকৃকত তিনজনের বিরুদ্ধে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় মামলা হয়েছে।

সর্বশেষ সোমবার সন্ধ্যায় সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি দেবাশীষ চৌধুরী জানান, আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।


 

জাতীয় থেকে আরও


Link copied