কুমিল্লার বরুড়ায় মাদ্রাসা শিক্ষকের বেত্রাঘাতে ছাত্রের মৃত্যু
০৫ অগাস্ট ২০২২, ২১:৫২ পিএম

কুমিল্লার বরুড়ায় মাদ্রাসা শিক্ষকের পিটুনিতে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের মারধরের কয়েকদিন পর শুক্রবার (৫ আগস্ট) কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ঐ ছাত্রের মৃত্যু হয়।
নিহত মাদ্রাসাছাত্রের নাম মো. সিহাব। সে উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের শশইয়া গ্রামের ডিলার বাড়ির শুকুর আলী ডিলারের ছেলে। সিহাব মেড্ডা আল মাতিনিয়া নূরানী মাদ্রাসার ছাত্র। সে ওই মাদরাসার শিক্ষক আব্দুর রবের তত্বাবধানে নূরানী শিক্ষা গ্রহণ করছিল।
মৃত ছাত্রের ভাবি সাংবাদিকদের বলেন, “আমার দেবরকে কয়েকদিন আগে মেড্ডা মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুর রব অসংখ্য বেত্রাঘাত করেন। এরপর সে অসুস্থ হয়ে পড়লে শিক্ষকরা তাকে ওষুধ এনে খাওয়ান। এতেও সে সুস্থ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার মাদ্রাসা থেকে ফোন করে সিহাবের অসুস্থতার খবর জানানো হয়। পরে আমার শ্বশুর সিহাবকে বাড়িতে নিয়ে আসে। পরে আমার শ্বশুর মাদ্রাসায় গিয়ে তাকে বাড়ি নিয়ে আসেন। অবস্থা খারাপ হওয়ায় শুক্রবার সকালে তাকে বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুপুর ১টা ১২ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।”
তার ভাবি আরও বলেন, তার দেবর প্রথমে বিষয়টি পরিবারকে জানায়নি। সে বলেছে এমনিতেই তার শরীরে জ্বর এসেছে। পরে শুক্রবার বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে যখন তাকে কুমিল্লায় পাঠানো হচ্ছিল তখন তার কাছে অসুস্থতার কারণ আবার জানতে চাইলে সে বলে, আবদুর রব হুজুর তাকে মেরে এই অবস্থা করেছে।
তিনি বলেন, হুজুর বেত্রাঘাত করেছেন বললে তাকে আবার মারবেন বলে হুমকি দিয়েছেন, তাই ভয়ে হুজুরের নাম বলেনি।
বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা বলেন, ছেলেটার (সিহাব) অবস্থা ভালো ছিল না। তাই তাকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু পরে শুনেছি সে পথেই মারা যায়।
এদিকে, শিক্ষকের ‘২০০ বেত্রাঘাতে’ ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে – এমন খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনার পর থেকেই শিক্ষক আবদুর রবের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেড্ডা আল মাতিনিয়া নুরানী মাদ্রাসার প্রধান আহমেদ শফি বলেন, “আমি তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলছি বিষয়টি নিয়ে। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে এখন কোনো কথা বলতে চাই না।”
স্থানীয় ঝলম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, “আমি স্থানীয় মেম্বারের [ইউপি সদস্য] কাছে শুনেছি মাদ্রাসার একজন শিক্ষক ওই শিক্ষার্থীকে আঘাত করেছেন। এর বাইরে বিস্তারিত জানি না। প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করছি।”
এ ব্যাপারে বরুড়া থানার ওসি ইকবাল বাহার মজুমদার বলেন, “খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তবে ওই শিক্ষার্থীর পরিবার এ ঘটনায় এখনও কোনো অভিযোগ করেনি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।”