গুরুতর অভিযোগ এনে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা : উত্তাল ক্যাম্পাস

Anweshan Desk

ডেস্ক রিপোর্ট

১৬ মার্চ ২০২৪, ১০:১১ এএম


গুরুতর অভিযোগ এনে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা : উত্তাল ক্যাম্পাস

সহপাঠী এবং সহকারী প্রক্টোরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফাইরুজ অবন্তিকা । শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা সদরের নিজ বাসায় গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন ফাইরুজ অবন্তিকা। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা তাকে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা অবন্তিকাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জাহাঙ্গীর হোসেন শুক্রবার রাতে বলেন, ‘নতুন দায়িত্ব নেয়ার পর পূ্র্বের ঘটনা নিয়ে নিয়ে অবগত ছিলাম না। আমি দায়িত্ব নেযার পর সে যদি আসত, তাহলে আমি ভিসি ম্যামের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নিতাম। বিষয়টি নিয়ে আমি অত্যন্ত দুঃখিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘উপাচার্যের নির্দেশে ইতোমধ্যে অভিযুক্ত সহপাঠী আম্মান এবং সহকারী প্রক্টরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অফিস খুললে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম (বামে) ও আম্মান সিদ্দিকী

ফেসবুক স্ট্যাটাসে ফাইরুজ অবন্তিকা লিখেছেন, ‘আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই, তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী আর তার সহকারী হিসেবে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম।’

অবন্তিকা লিখেছেন, ‘আম্মান যে আমাকে অফলাইন অনলাইনে থ্রেটের ওপর রাখত, সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানাভাবে ভয় দেখায় আম্মানের হয়ে যে আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার। আমি জানি, এখানে কোনো জাস্টিস পাব না। কারণ দ্বীন ইসলামের অনেক চামচা ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। এই লোককে আমি চিনতামও না। আম্মান আমাকে সেক্সুয়ালি এবিউজিভ কমেন্ট করায় আমি তার প্রতিবাদ করলে আমাকে দেখে নেওয়ার জন্য দ্বীন ইসলামের শরণাপন্ন করায়। আর দ্বীন ইসলাম আমাকে তখন প্রক্টর অফিসে একা ডেকে নারীজাতীয় গালিগালাজ করে। সেটা অনেক আগের ঘটনা হলেও সে এখনো আমাকে নানাভাবে মানহানি করছে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন কথা বলে। আর এই লোক কুমিল্লার হয়ে কুমিল্লার ছাত্র কল্যাণের তার ছেলেমেয়ের বয়সী স্টুডেন্টদের মাঝে কী পরিমাণ প্যাঁচ ইচ্ছা করে লাগায়, সেটা কুমিল্লার কারও সৎসাহস থাকলে সে স্বীকার করবে। এই লোক আমাকে আম্মানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৭ বার প্রক্টর অফিসে ডাকায় নিয়ে খানকি তুই এই ছেলেরে থাপড়াবি বলসস কেন? তোরে যদি এখন আমার জুতা দিয়ে মারতে মারতে তোর ছাল তুলি তোরে এখন কে বাঁচাবে?

‘আফসোস এই লোক নাকি ঢাবির খুব প্রমিন্যান্ট ছাত্রনেতা ছিল। একবার জেল খেটেও সে এখন জগন্নাথের প্রক্টর। সো ওর পলিটিক্যাল আর নষ্টামির হাত অনেক লম্বা না হলেও এত কুকীর্তির পরও এভাবে বহাল তবিয়তে থাকে না এমন পোস্টে। কোথায় এই লোকের কাজ ছিল গার্ডিয়ান হওয়া আর সে কিনা শেষমেশ আমার জীবনটারেই শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি দিল না।

‘আমি উপাচার্য সাদেকা হালিম ম্যামের কাছে আপনি এই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক হিসেবে আপনার কাছে বিচার চাইলাম।

‘আর আমি ফাঁসি দিয়ে মরতেসি। আমার উপর দিয়ে কী গেলে আমার মতো নিজেকে এত ভালোবাসে যে মানুষ সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে। আমি জানি এটা কোনো সলিউশন না কিন্তু আমাকে বাঁচতে দিতেসে না বিশ্বাস করেন। আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইসিলাম! আর পোস্টমর্টেম করে আমার পরিবারকে ঝামেলায় ফেলবেন না। এমনিতেই বাবা এক বছর হয় নাই মারা গেছেন, আমার মা একা। ওনাকে বিব্রত করবেন না। এটা সুইসাইড না, এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার। আর আম্মান নামক আমার ক্লাসমেট ইভটিজারটা আমাকে এটাই বলছিল যে আমার জীবনের এমন অবস্থা করবে, যাতে আমি মরা ছাড়া কোনো গতি না পাই। তাও আমি ফাইট করার চেষ্টা করসি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সহ্যক্ষমতার।’

এদিকে অবন্তিকার আত্মহত্যার খবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা শুক্রবার গভীর রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। আজ সকালেও প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেছে তারা।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা থেকে আরও


Link copied