জুতার মালা পরিয়ে অপমানিত করার ৪৫ দিন পর ফুলের মালা পরিয়ে ফেরানো হলো নড়াইলের সেই অধ্যক্ষকে

Anweshan Desk

জাতীয় ডেস্ক

০৩ অগাস্ট ২০২২, ১৩:১৪ পিএম


জুতার মালা পরিয়ে অপমানিত করার ৪৫ দিন পর ফুলের মালা পরিয়ে ফেরানো হলো নড়াইলের সেই অধ্যক্ষকে

ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে  জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করার ৪৫ দিন পরে কর্মস্থলে ফেরানো হলো নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে। 

 

 বুধবার (৩ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ ও সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি কলেজে ফিরতে দেখা যায় তাঁকে। স্থানীয় সংসদ সদস্য বি এম কবিরুল হকের গাড়িতে বেলা ১১টা ৪৭ মিনিটে কলেজে আসেন অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস। এ সময়ে তার সঙ্গে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবাস চন্দ্র বোসসহ রাজনৈতিক দলের নেতারা।এ সময়ে কলেজ গেটে উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দেখা যায় তাঁকে ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করে নিতে। 

 

কলেজে ঢোকার সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘১৮ জুনের ঘটনা ছিল অপ্রত্যাশিত। আজকে কলেজে যে পরিবেশ, সবাই আমাকে যে সম্মান দিয়েছে, আমি আনন্দ উপভোগ করছি। বিগত দিনের সবকিছু আমি ভুলে যেতে চাই। দেশবাসীকে বলব আমার জন্য দুঃখ, কষ্ট না করার জন্য। আমি সবার জন্য কল্যাণ কামনা করি।’

কলেজে প্রবেশ করানোর পর তাঁকে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসানো হয় আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে। কলেজ থেকে বের হয়ে তিনি নিজের বাড়িতে যান। গত ১৮ জুন ঘটনার পর থেকে তিনি ইসলামী উগ্রপন্থীদের হামলার আশংকায় আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হন। ৩৫ দিন বন্ধ থাকার পর গত ২৪ জুলাই খুলেছে কলেজ। এরপর আজই তিনি কলেজে যান। এরপর ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেন কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অচিন কুমার চক্রবর্তী। এরপর শিক্ষার্থীরা ফুলের মালা পরিয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম জানায় তাঁকে। তাঁকে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসিয়ে দেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদলের কর্মকর্তা, স্থানীয় সংসদ সদস্য বি এম কবিরুল হক, কলেজে পরিচালনা পরিষদের কর্মকর্তা ও উপস্থিত অন্যরা।

 

এসময় স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, দীর্ঘদিন পর কলেজে যোগদান করে খুব ভালো লাগছে। আমার সঙ্গে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটা ঘটেছে, সেটা আমি ভুলে যেতে চাই। সবার সহযোগিতায় এখন থেকে কলেজের সার্বিক কার্যক্রম চালিয়ে যাব। আমার দুঃসময়ে যারাই পাশে ছিলেন, তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

সহকর্মী শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ১৮ জুন আমি আপনাদের রক্ষা করতে পারিনি, নিরাপত্তা দিতে পারিনি। এজন্য ক্ষমা চাই। আশা করি এখন থেকে সবাই আমাদের পাশে থাকবে। আশা করি এ ধরনের ঘটনা এই কলেজে আর ঘটবে না।

 

উল্লেখ্য, গত ১৮ জুন শনিবার নুপুর শর্মার পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্টাটাস দেওয়ার হুজুগে নড়াইলে মীর্জাপুর ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং একই কলেজের রাহুল নামের এক  হিন্দু  শিক্ষার্থীকে  আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে  মারধর এবং গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার আরেকটি ঘটনা ঘটে। গত কয়েক বছর ধরে ইসলাম ধর্ম অবমাননা এবং ধর্মানুভুতিতে আঘাতের গুজব ছড়িয়ে  উগ্রপন্থী ও ধর্মান্ধ মুসলমানদের একটি চক্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর  নির্যাতন,  লাঞ্ছিত, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে।  সংখ্যালঘু অধিকার কর্মীদের অভিযোগ,  বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং রাষ্ট্রের ধর্মীয় উগ্রবাদ তোষণের কারণে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন থেকে আরও


Link copied