লোহাগড়ায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতাঃ গ্রেপ্তার অধিকাংশই যুক্ত আওয়ামী রাজনীতিতে

Anweshan Desk

জাতীয় ডেস্ক

২৪ জুলাই ২০২২, ১৫:০৪ পিএম


লোহাগড়ায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতাঃ গ্রেপ্তার অধিকাংশই যুক্ত আওয়ামী রাজনীতিতে

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের সাহাপাড়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলার ঘটনায়  শুক্রবার (২২ জুলাই) পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

 

 এঁদের মধ্যে চারজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং তাঁদের অনেকের পরিবারের একাধিক সদস্য স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। বাকি পাঁচজনের মধ্যে একজনের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া না গেলেও অন্য চারজন আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক বলে জানা গেছে।

এই মামলায় ৯ নম্বর আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বাটিকাবাড়ি গ্রামের উজ্জ্বল শেখকে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে যশোরের বাঘারপাড়া থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। উজ্জ্বলের বাবা দিঘলিয়া ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, তাঁর স্ত্রী শামসুন্নাহার স্বর্ণা দিঘলিয়া ইউনিয়নের মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ভাই মো. এমদাদুল হক দিঘলিয়া ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক। উজ্জ্বলের কোনো পদ না থাকলেও পারিবারিক সূত্রে স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা আছে। 

গ্রেপ্তার ৯ জনের মধ্যে অন্যতম রেজাউল শেখ। সাহাপাড়ায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা মামলার ৪ নম্বর আসামি তিনি। বাটিকাবাড়ি গ্রামে তাঁর বাড়ি এবং তিনি রেজাউল উজ্জ্বল শেখের আপন চাচা। দিঘলিয়া বাজারে তাঁর দরজির দোকান আছে। স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতিতে কোনো পদে না থাকলেও পারিবারিক সূত্রে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন রেজাউল।

আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া কুমড়ি গ্রামের জিল্লুর রহমান।  গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দিঘলিয়া ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত প্রার্থী লীনা ইয়াসমিনের ভাতিজা ও একনিষ্ঠ কর্মী জিল্লুর। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সব মিছিল-মিটিংয়ে তাঁকে সক্রিয় দেখা যায়।  মামলার ২ নম্বর আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো রাসেল স্থানীয় আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিং ও প্রোগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন সব সময়।

কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি কুমড়ি পশ্চিমপাড়া গ্রামের রোমান মোল্লার। ঘটনার দিন যে মিছিল থেকে সাহাপাড়ায় হামলা করা হয়, সেই মিছিলে ছিলেন তিনি। রোমানকে ভাঙচুরের মামলায় ৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে। 

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার দিন দুপুর, বিকেল ও সন্ধ্যার বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে গ্রেপ্তারকৃতদের শনাক্ত করা হয়েছে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী তালবাড়িয়া গ্রামের মো. সাঈদ শেখ সেদিনের পুরো ঘটনার সংগঠক হিসেবে কাজ করেন। মামলার ১ নম্বর এই আসামি সেদিন লোকসমাগমে ভূমিকা পালন করেছেন এবং এসব মানুষকে উত্তেজিত করে তুলেছেন বিভিন্ন সময় নানা বক্তব্যের মাধ্যমে। তাঁকে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন দিঘলিয়া গ্রামের মো. রাসেল মৃধা (৩৮), লুটিয়া গ্রামের কবির গাজী (৪০), বাটিকাবাড়ি গ্রামের রেজাউল শেখ (৪০) এবং বয়রা গ্রামের মো. মাসুম বিল্লা (৩৪)। সাঈদ শেখের পরে বাকিরা পর্যায়ক্রমে ১ থেকে ৫ নম্বর আসামি। বাকিরা মিছিল, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

আসামি শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আবু হেনা। তিনি বলেন, ‘সাহাপাড়ায় হামলার ঘটনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁদের শনাক্ত করেছি। আশা করছি, দ্রুতই অন্যদেরও আইনের আওতায় আনতে পারব।’

 

ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন থেকে আরও


Link copied