বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে কলকাতার উপ-হাইকমিশন ঘেরাও বিজেপির

Anweshan Desk

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২১ জুলাই ২০২২, ১৬:১৭ পিএম


বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে কলকাতার উপ-হাইকমিশন ঘেরাও বিজেপির

বাংলাদেশে নড়াইল জেলার লোহাগড়ায় হিন্দু ধর্মালম্বীদের ওপর আক্রমণ, বসত বাড়ি-দোকান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন ঘেরাও কর্মসূচির পালন করেছে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি।

May be an image of 10 people, people sitting and people standing

বুধবার (২০ জুলাই) বিকাল ৩টায় পার্ক সার্কাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মরনীতে অবস্থিত বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের সামনে এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এর আগে নড়াইলের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে গত সোমবার ( ১৮ জুলাই) পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে চিঠি দিয়ে তিনি আবেদন জানান, ‘বাংলাদেশের হিন্দুদের বাঁচান।’

গতকালের প্রতিবাদ সমাবেশে প্রায় এক হাজার বিজেপি কর্মী-সমর্থক নিরাপত্তা বেস্টনির বাইরে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশের হিন্দুদের সুরক্ষার দাবিতে দীর্ঘক্ষণ ধরে  রাস্তায় বসে পড়ে, হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদ জানালেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। স্লোগান তুললেন, “বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে কেন? শেখ হাসিনা জবাব চাই, জবাব দাও।” সমস্ত হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ হবার আবেদন জানালেন তাঁরা। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের হিন্দুদের পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হলো। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, “বাংলাদেশের হিন্দুদের পাশে ভারতীয় হিন্দুরা ছিলাম, আছি, থাকবো।”

May be an image of 4 people, people sitting, people standing, outdoors and crowd

বিজেপির পক্ষ থেকে উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি কল্যাণ চৌবে, দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সংঘমিত্রা চৌধুরী ও রাজ্যনেতা দীপাঞ্জন গুহ হিন্দুদের সুরক্ষা দেওয়া ও দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে বাংলাদেশ ডেপুটি হাই-কমিশনারকে একটি স্মারক লিপি দেন। এতে বিজেপি বাংলাদেশে নড়াইল জেলার লোহাগড়ায় হিন্দু ধর্মালম্বীদের ওপর আক্রমণ, বসত বাড়ি-দোকান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে সংখ্যালঘু হিন্দুদের প্রতি অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেছেন।

 

তারা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর হিন্দুদের প্রতি অত্যাচার, সম্পত্তি লুট ও নারীদের ওপর নির্যাতনের কারণে তারা ভিটে-মাটি ছেড়ে ভারতে পালিয়ে এসেছেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, যে কয়জন হিন্দু বাংলাদেশে থেকে গেছেন তাদের প্রতি মৌলবাদীরা অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। কখনও গণেশ মূর্তির পায়ের তলায় ধর্মগ্রন্থ রেখে দিয়ে পুজা মণ্ডপ ভাঙচুর, হিন্দু মহল্লায় আক্রমণ করা হচ্ছে। কখনও সোশাল মিডিয়ার একটি আইডি থেকে নবীর নামে কিছু লিখে তাকে উপলক্ষ করে মারধর, খুন, শুধু হিন্দু হওয়ার অপরাধে অধ্যাপকের ওপর চড়াও হওয়ার মতো ঘটনা আকছার ঘটছে। সম্প্রতি নড়াইল জেলার লোহাগড়ায় হিন্দু ধর্মলম্বীদের ওপর আক্রমণ, বসত বাড়ি-দোকান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘৃণ্য ঘটনাও ঘটেছে। আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’

 

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের নাগরিকদের সুরক্ষা, খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা সরকারের অবশ্য কর্তব্য, আপনাদের মনে করিয়ে দিতে হবে না, তা আমরা জানি। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতিদিনই সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার, নিধন, সম্পত্তি লুটসহ নারীদের ওপর যে নির্যাতন চলছে তাতে আমরা ব্যথিত। মাতৃ জননীর প্রতিনিধি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা অনুরোধ জানাতে চাই, এসব ঘটনা আপনি কড়া হাতে দমন করুন, শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে উদ্যোগী হোন।’

 

বিজেপির উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি কল্যাণ চৌবে বলেন, ‘আমরা যে হিন্দু সম্প্রদায়ের যা পাঁচ হাজার বছর ধরে শান্তির কথা বলে। তাদের ওপর এই অত্যাচার মেনে নেওয়া যায় না। বাংলাদেশের হিন্দুরা তাদের ধর্মীয় আচার-আচরণ করতে ভয় পাচ্ছেন। হিন্দু রক্ষার্থে আমরা আজ এখানে এসেছি। এটা কোনও রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। ধর্মরক্ষার আন্দোলন। বাংলাদেশের হিন্দুদের নাগরিক অধিকার আজ বিপন্ন।’

 

এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে চিঠি লিখে উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত এ বিষয়ে ভারত সরকারের হস্তক্ষেপ প্রকাশ করতে অনুরোধ করেছেন। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘আবারও বাংলাদেশে হিন্দুরা আক্রান্ত। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় দীঘলিয়া গ্রামের সাহা পাড়ায় ধর্ম অবমাননার অজুহাতে আবারও হিন্দু সনাতনীদের ঘর জ্বালানো হয়, মন্দির ভাঙ্গা হয়, দোকানে লুটপাট চালানোর পরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এক কলেজ ছাত্রের ফেসবুক আইডি থেকে বিতর্কিত মন্তব্য করে একটি পোস্ট দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তবে পোস্টটি আসল কিনা, এখনও প্রমাণিত নয়, তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।’

May be an image of 6 people, people sitting, people standing and indoor

শুভেন্দু গত বছরের দুর্গা পুজার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ‘গত বছর দুর্গা পূজোর সময় এভাবেই অভিযোগ ওঠে যে ভগবান হনুমানের শ্রীচরণের পাশে নাকি ধর্মীয় ধর্মগ্রন্থ রাখা হয়েছে। কিছু হিন্দুকে হত্যা করে, হিন্দু নারীদের সম্ভ্রম লুট করে, ঘর-বাড়ি-দোকানপাট লুটপাট করে, মন্দির আক্রমণ করে দেব দেবীর মূর্তি ভাঙার পর পুলিশ জানালো যে মূল চক্রান্তকারীর নাম ইকবাল হোসেন। জেনে বুঝেই এই অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটানো হয় হিন্দুদের ওপর আঘাত হানার জন্য।’

 

অন্যদিকে এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সামাজিক মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘শুক্রবারের নামাজের শেষে জিহাদীদের আক্রমণ নেমে এসেছে হিন্দুদের ওপর। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানাই এই সহিংসতার ঘটনায় হস্তক্ষেপ ও দোষীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য। সেই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গবাসীকে জিজ্ঞেস করতে চাই আপনারা এই ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নেবেন কিনা?’

 

ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন থেকে আরও


Link copied