মন্দির-মসজিদ নিয়ে পোস্ট ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ঝুমন দাশকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ
৩১ অগাস্ট ২০২২, ০০:৩৬ এএম
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নোয়াগাঁওয়ের ঝুমন দাশের বাড়ি থেকে তাকে শাল্লা থানায় নিয়ে যায় পুলিশের একটি দল। ফেসবুকের ধর্ম অবমাননাকর পোস্ট দিয়েছেন, এমন অভিযোগ তুলে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁওয়ের সেই ঝুমন দাশ আপনকে আবারও থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তাকে থানাতেই আটকে রাখা হয়েছে। ঝুমনের স্ত্রী সুইটি দাশের দাবী, ধর্ম অবমাননাকর কোনো পোস্ট ঝুমন দেননি, বরং তাকে ফের হয়রানি করতেই আবারও তুলে নিয়েছে পুলিশ।
তবে পুলিশের দাবী, আগের মতো কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য ঝুমন দাশকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে।
২০২০ সালের ১৫ মার্চ হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ফেইসবুক পোস্টে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ তোলেন ঝুমন দাস। এর দুই দিন পর নোয়াগাঁও গ্রামে ঝুমনের দেয়া ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে হেফাজতে ইসলামের ব্যাজ মাথায় নিয়ে ‘হেফাজতের অ্যাকশন, মামুনুলের অ্যাকশন, বাবু নগরীর অ্যাকশন’ স্লোগান দিয়ে হামলা চালায় ধর্মান্ধ উগ্রবাদী গোষ্ঠী। হাজারো ধর্মান্ধ উগ্রবাদী মুসলমান দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অন্তত ৯০টি ঘর, ৪টি মন্দিরে হামলা, লুটপাট ও ভাংচুর চালায়।
আটকের ৬ দিন পর ২২ মার্চ শাল্লা থানায় পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করে। এ মামলায় প্রায় ৬ মাস জেলে থাকার পর ২৮ সেপ্টেম্বর শর্তসাপেক্ষে জামিনে মুক্ত হন ঝুমন দাশ আপন।
ঝুমন দাশের স্ত্রী অন্বেষণ নিউজকে বলেন, 'আজ সাড়ে ১১টার দিকে ঝুমনকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশ দাবী করছেন,ঝুমন ফেসবুকের ধর্ম অববমাননাকর পোস্ট দিয়েছেন, কিন্তু তার দেওয়া সাম্প্রতিক কোনো পোস্টই ধর্ম অবমাননাকর না। তাকে হয়রানি করতেই থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি নিজেও দুপুর থেকে থানায় অবস্থান করছি।'
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের দিরাই সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবু সুফিয়ান বলেন, 'সিরাজগঞ্জের একটি মন্দিরের সামনে মসজিদের দানবাক্স লাগানো হয়, এটা নিয়ে ঝুমন কয়েকদিন আগে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন এই লিখে যে মসজিদের দান বাক্স মন্দিরের সামনে। ঐ পোস্টে ৬-৭ লাইনের মতো ধর্ম অবমাননাকর কথা লেখা আছে। এটা নিয়ে কথা বলতেই তাকে থানায় আনা হয়েছে।'
'তবে ঝুমন দাশ বলেন যে, তিনি ঐ রকম পোস্ট দিয়েছেন-কী দেননি তা তিনি মনে করতে পারছেন না। এখন এক্সপার্ট ছাড়া এটা নিশ্চিত হওয়া যাবে না যে সে এরকম কোনো পোস্ট দিয়েছে কি দেন নি। পোস্টটি তিনি ডিলিট করে দিয়েছেন বলে এখন তার ফেসবুক টাইমলাইনে সেটি নেই।
তবে ততক্ষণে অনেকেই দেখেছেন, অনেক কমেন্ট হয়েছে। এ কারণে ঐ এলাকায় ২ দিন ধরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে গতবার যা হয়েছে তা আবারও যেন না হয়', বলেন তিনি।
ঝুমনের মা নিভা রানী দাস বলেন, “তিন দিন আগে কয়েকজন পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসে জানায়, তারা আমাদের নিরাপত্তা দিতে এসেছে। মঙ্গলবার সকালে পুলিশ এসে ঝুমনকে শাল্লা থানায় নিয়ে যায়। যাওয়ার আগে বলে যায়, সার্কেল এএসপি তাকে ডেকেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ আমাদের জানায়।”
উক্ত ঘটনার সার্বিক বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও অবগত করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসলে তখন সে আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জানতে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।