নীলফামারীতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হিন্দু শিক্ষক বরখাস্ত

Anweshan Desk

ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন ডেস্ক

১৯ জুন ২০২২, ০২:২৪ এএম


নীলফামারীতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হিন্দু শিক্ষক বরখাস্ত

শিক্ষক ঈশ্বর চন্দ্র রায়ের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ

এবার নীলফামারীতে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক নবী মোহাম্মদকে নিয়ে কথিত কটুক্তি করার হুজুগ ওঠায় ঈশ্বর চন্দ্র রায় নামক এক হিন্দু স্কুল শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে। ভিক্টিম শিক্ষক ঈশ্বর চন্দ্র রায়  সদর উপজেলার ককই বড়গাছা দ্বিমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্থানীয় উগ্রপন্থী ধর্মান্ধদের চাপের মুখে তড়িগড়ি করে শিক্ষক ঈশ্বর চন্দ্রকে  বরখাস্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, গত ১৫ জুন বুধবার  স্কুলের দশম শ্রেণির কৃষি শিক্ষা পরীক্ষা চলাকালে  শিক্ষার্থীরা শোরগোল করলে  শিক্ষক ঈশ্বর চন্দ্র রায় ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক নবী মোহাম্মদকে শয়তানের সাথে তুলনা করে শিক্ষার্থীদেরকে শয়তান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বলে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অভিযোগ তোলা হয়।

পরে ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবে ছড়িয়ে দিয়ে স্থানীয় উগ্রপন্থীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি  করা হয়।  এর ধারাবাহিকতায় গত ১৮ জুন শনিবার তৌহীদি জনতার ব্যানারে  বিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন স্থানীয় ধর্মান্ধ মুসলমানদের একটি চক্র।

বিক্ষোভ মিছিল ও মানব বন্ধন থেকে শিক্ষক ঈশ্বর চন্দ্র রায়ের ফাঁসির দাবিসহ তাঁর বিরুদ্ধে অশালীন ভাষায় গালাগালি ও শ্লোগান দেয়া হয়।

মানববন্ধন ও বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। 

উগ্রপন্থীদের আয়োজিত বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে স্থানীয়  ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা এবং লক্ষীচাপ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান  চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান। তাঁরা উভয়কেই শিক্ষক ঈশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে বিষোদগার করাসহ তাঁর শাস্তি দাবি করেন।

 বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গণপতি রায় মিডিয়াকে জানান, ‘ঘটনা শোনার পর ওই দিনেই শিক্ষক ইশ্বর চন্দ্র রায়কে আমার অফিসে ডেকে নিয়ে আসি। তখন তিনি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। শনিবার মানববন্ধন হওয়ার পর সাময়িক বরখাস্ত করা হয় তাকে।’

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। সবাইকে শান্ত থাকতে বলেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

উল্লেখ্য,  গত কয়েক বছর ধরে ইসলাম ধর্ম অবমাননা এবং ধর্মানুভুতিতে আঘাতের গুজব ছড়িয়ে  উগ্রপন্থী ও ধর্মান্ধ মুসলমানদের একটি চক্র হিন্দু ধর্মাবলম্বী  শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে নির্যাতন,  লাঞ্ছিত, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে।  সংখ্যালঘু অধিকার কর্মীদের অভিযোগ,  বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং রাষ্ট্রের ধর্মীয় উগ্রবাদ তোষণের কারণে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন থেকে আরও


Link copied