ময়মনসিংহে কাওয়ালি অনুষ্ঠানে হামলা ও মাজারে ভাঙচুর

Anweshan Desk

Anweshan Desk

১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:১৬ এএম


ময়মনসিংহে কাওয়ালি অনুষ্ঠানে হামলা ও মাজারে ভাঙচুর

ময়মনসিংহ শহরে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো একটি মাজারে সামা কাওয়ালি অনুষ্ঠানে হামলার পর মাজারের কিছু অংশ গুঁড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় একটি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। বুধবার দিনগত রাতে দুই দফায় নগরের থানাঘাট এলাকায় হজরত শাহ সুফি সৈয়দ কালু শাহের (রহ.) মাজারের বার্ষিক ওরস চলাকালে এই হামলা–ভাঙচুর হয়।

 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গতকাল রাত ১১টার দিকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, পাঞ্জাবি–পাজামা ও টুপি পরা দুই শতাধিক মানুষ এ অনুষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর চালাচ্ছে। এ সময় মঞ্চ ও শতাধিক চেয়ার এবং সাউন্ড সিস্টেম ভাঙচুর করা হয়। পরে জানা যায়, অভিযুক্তরা ময়মনসিংহ শহরের বড় মসজিদ জামিয়া ফয়জুর রহমান (রহ.) মাদরাসার শিক্ষার্থী।

 

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, নগরের কোতোয়ালি মডেল থানার বিপরীত দিকে অবস্থিত হজরত শাহ সুফী সৈয়দ কালু শাহ (রহ)–এর মাজার। মাজারের ১৭৯তম বার্ষিক ওরস উপলক্ষে ব্রহ্মপুত্র নদের পারে কাওয়ালি গানের আয়োজন করে ভক্তরা। বুধবার রাত ১১টার দিকে সামা কাওয়ালি (আল্লাহর ওলি–নবীর প্রশংসাসূচক গান) অনুষ্ঠান শুরু হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে হামলা করে স্থানীয় একটি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। তখন দ্রুত সামা শিল্পীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা গানের মঞ্চ ও সামনের চেয়ারগুলো ভেঙে চলে যায়। পরে রাত ৩টার দিকে মাজারে হামলা হয়। মাজারের পাকা স্থাপনার কিছু অংশ ও ভেতরে থাকা জিনিসপত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

 

এ বিষয়ে কণ্ঠশিল্পী মিজান বাউলা বলেন, ‘৪৫ বছর ধরে হযরত শহ সুফী সৈয়দ কালু শাহ (রহ.)-এর মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও সামা কাওয়ালি অনুষ্ঠান হয়ে আসছে, কোনোদিন এমন হয়নি। আমি যখন সামা কাওয়ালি পরিবেশন করছি তখন বড় মসজিদ মাদরাসার একদল হুজুর এসে হামলা ভাঙচুর শুরু করে। আমাদের ২-৩ জন আহত হয়। ভাংচুর করা হয় প্লাস্টিকের চেয়ার, সাউন্ড সিস্টেম ও মঞ্চ। এ ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। থানার সামনে এমন ঘটনা কখনো কাম্য ছিল না।’

 

মাজারের অর্থ সম্পাদক মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘মাজারটিতে ১৭৯তম বার্ষিক ওরস উপলক্ষে মিলাদ ও গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তিন-চারটি গান হওয়ার পরই হঠাৎ থানার ওসি এসে লোকজনকে দ্রুত সরে যেতে বলেন। এর মধ্যে বড় মসজিদের ছাত্ররা এসে হামলা চালিয়ে পণ্ড করে দেয় সামা কাওয়ালির আসর। পরে রাত ৩টার দিকে মাজারটিও গুঁড়িয়ে দিয়েছে তারা। প্রশাসনের লোকজন এসে বলে গেছে, তাঁরা বিষয়টি দেখছে।’

 

এই অভিযোগের বিষয়ে জামিয়া ফয়জুর রহমান বড় মসজিদের প্রধান মুয়াজ্জিন শহীদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাতের মাইক বাজিয়ে গানবাজনা করছিল মাজারের লোকজন। উচ্চ স্বরে গান বাজানোর কারণে ছাত্রদের পড়ায় সমস্যা হয়। এই অবস্থায় ছাত্ররা গিয়ে গানের সাউন্ড কমাতে বলে। কিন্তু তা না করে গানের আসর থেকে উসকানিমূলক কথা বলায় ছাত্ররা ক্ষিপ্ত হয়ে সেখানে গিয়ে ভাঙচুর করে।’

 

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘মাজারে গান শুরু হওয়ার পর হঠাৎ করে শিক্ষার্থীরা গিয়ে সেটি ভেঙে দেয়। পরে রাত ৩টার দিকে মাজারটিও ভেঙে দিয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ রাখা হয়েছে। সবকিছু আমাদের নজরদারিতে আছে।’

 

এদিকে, মাজার ও গানের আসরে হামলার ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, ‘মাজারসহ বিভিন্ন স্থানে গানের আসরে হামলা হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যারা বিক্ষুব্ধ, তাদের মামলা করার আহ্বান জানাই।’

 

সাক্ষাৎকার থেকে আরও

কোনো খবর পাওয়া যায়নি


Link copied