এক হিন্দুকে বাদী করতে চেয়েছিলেন শাল্লার সেই ওসি

Anweshan Desk

সংখ্যালঘু নির্যাতন ডেস্ক

০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫:০১ পিএম


এক হিন্দুকে বাদী করতে চেয়েছিলেন শাল্লার সেই ওসি

ঝুমন দাশ

সুনামগঞ্জের শাল্লার ঝুমন দাশ তার ফেসবুকে মসজিদের দান বাক্স মন্দিরের গেইটে এই সংক্রান্ত একটি পোস্ট শেয়ার করেন গত ২৮ আগস্ট। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছুটা ভাইরাল হয় সেই পোস্টটি। 

তারপর থেকেই পুলিশ নজরে রাখেন ঝুমন দাশের উপর। দাঁড়াইন বাজারে পুলিশি টহল জোরদার করে। ৩০ আগস্ট সকাল ১১ঃ৩০ টার দিকে ঝুমন দাশকে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। চলে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ।

এই দীর্ঘসময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ওসি আমিনুল ইসলাম একজন হিন্দু ব্যক্তিকে খুঁজছিলেন ওই মামলার বাদী করা যায় কিনা। তাহলে এই মামলায় আর কোনো বিতর্ক থাকবে না। তাও আবার সাধারণ কোনো হিন্দু নয়, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিন্দু। সে অনুযায়ী প্রস্তাব করা হয় উপজেলার বাহাড়া ইউপির ভেড়াডহর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয় কুমার বৈষ্ণবকে। প্রস্তাবে জয় কুমার বৈষ্ণব রাজি না হওয়ায় বিফলে যায় ওসির এই দুর্ধর্ষ পরিকল্পনা। পরে মধ্যরাতে এসআই সুমন নুর ইসলাকে বাদী করে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ দেখিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় ঝুমন দাশকে।

বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা জয় কুমার বৈষ্ণব মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদকে বলেন, ঝুমন দাশের মামলার বাদী আমাকে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ওসি। আমি বলেছি-

আমি ফেসবুক দেখিও না, বুঝিও না। আমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে প্রথমই তো আটকে যাব। তাছাড়া আমি অসুস্থ। পরে আমি চলে আসি। এ ব্যাপারে উপজেলা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাশ বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবটি করা হয়েছিল। তারা হয়তো চেয়েছিল একজন হিন্দু লোককে বাদী করতে। সেই হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা জয় কুমার বৈষ্ণবকে প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু কোনো হিন্দু লোক বাদী হতে রাজি হননি।

সরজমিনে ঝুমন দাশের গ্রাম নয়াগাঁও গিয়ে দেখা যায়, নিম্নমানের ঢেউটিন দ্বারা যৌথভাবে তৈরি ঝুমন দাশের ঘরের অংশটুকু বন্ধ। ওই ঘরে গত বছরের সাম্প্রদায়িক হামলার ভাঙচুরের চিহ্ন এখনো রয়েছে। দেখেই বুঝা যায় ঝুমন দাশের পরিবারের যে ‘নুন আনতে যে পান্তা ফুরায়’ এমন অবস্থা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নয়াগাঁও গ্রামের অনেকই বলেছেন, এটি প্রতিপক্ষের ইন্ধনেই আরেকটি মামলা দেয়া হয়েছে। ফেসবুকে দেয়া ঝুমন দাশের স্ট্যাটাসে এলাকায় কোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। তবে গত বছরের সাম্প্রদায়িক হামলা মামলার আসামিদের থানার লোকজনদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠতে দেখা গেছে বলে জানান তারা।

মুঠোফোনে ঝুমন দাশের মা নিভা রাণী দাশ বলেন, সিরাজগঞ্জের ‘একটি মন্দিরের সামনে মসজিদের দানবাক্স’ নিয়ে ফেসবুকে নিজের মতামত দিয়েছে আমার ছেলে। এই পোস্ট তো অনেকেই দিয়েছে। শুধু আমার ছেলে লিখলেই দোষের। বন্যার সময় তো দেশ বিদেশ থেকে আসা ত্রাণ সামগ্রী হিন্দু-মুসলমানের ঘরে ঘরে বিতরণ করেছে। তাহলে আমার ছেলে সাম্প্রদায়িক কীভাবে হলো? গত বছরও আমার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে পুলিশ। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে হাত পেতে টাকা এনে মামলার তারিখে যেতে হয়েছে। আমি গরিব মানুষ। ঘরেই ছোট একটি মুদি দোকান চালায় ঝুমন। দোকানটিও আর থাকবে না। এখন খাইমুই কি আর মামলাই বা চালাইমু কেমনে। নিভা রাণী দাশ তার ছেলের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান আদালতের কাছে।

সাম্প্রতিক একটি পোস্টকে ঘিরে গত মঙ্গলবার সকালে শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের বাড়ি থেকে ঝুমন দাসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওইদিন রাতে পুলিশ বাদী হয়ে দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বুধবার দুপুরে সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লা জোন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ঝুমনকে হাজির করার পর বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ঝুমন দাসের ফেসবুক আইডিতে ধর্মকে ইঙ্গিত করে ‘উসকানিমূলক’ পোস্ট দেয়া হয়। উসকানিমূলক এই পোস্ট দেয়ার পর তিন দিন এলাকায় পুলিশ মোতায়েন ছিল। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে তাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয় তার বিরুদ্ধে।


Link copied