রামুতে সাম্প্রদায়িক হামলার ১০ বছর : এখনও শুরু হয়নি বিচার

Anweshan Desk

Anweshan Desk

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:২৯ এএম


রামুতে সাম্প্রদায়িক হামলার ১০ বছর : এখনও শুরু হয়নি বিচার

কক্সবাজারের রামু ও উখিয়ার বৌদ্ধ পল্লীতে হামলার ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামু, উখিয়া ও টেকনাফে বৌদ্ধ পল্লীতে এ হামলা এবং অগ্নিসংযোগ চালানো হয়। এ সময় ১৩টি বৌদ্ধ বিহার ও ৩০টি বসতবাড়ি ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়।পরের দিন উখিয়া ও টেকনাফের আরও ৭টি বৌদ্ধবিহার ও হিন্দু মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এ ঘটনায় ১৯টি মামলার মধ্যে ১টি আপসে নিষ্পত্তি হলেও ১৮টি মামলা কক্সবাজারের বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন আছে। কিন্তু সাক্ষীর অভাবে বিচারকাজ শুরু হচ্ছে না। মামলাগুলোর ১৬৭  সাক্ষীর বেশির ভাগই বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন, কিন্তু ভয়ে তারা সাক্ষী দিতে আসছে না।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, স্থানীয় এক যুবকের ফেসবুক থেকে ধর্ম অবমাননাকর ছবি পোস্ট করার অভিযোগে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ২টার দিকে কয়েকশ লোক লাঠিসোঁটা, দা ও কিরিচ নিয়ে বিহারে হামলা চালায়। সেইসঙ্গে বিহারে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। তবে যে যুবকের ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে, ১০ বছর ধরে তার খোঁজ জানেন না বাবা-মা। এমনকি ওই যুবক স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোথায় আছেন তাও জানাতে পারেননি পুলিশ ও স্বজনরা।

ওই যুবকের বাবা বলেন, ‌‌‘আমার ছেলেটি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিল। ওই দিনের পর তাকে হারিয়ে অর্থকষ্টে দুরবস্থায় দিন কাটাচ্ছি আমরা। ছেলের সঙ্গে এ পর্যন্ত কোনোদিন যোগাযোগ হয়নি। তবে শুনেছি, ছেলে বেঁচে আছে। তার স্ত্রী-সন্তানও বেঁচে আছে। কিন্তু কোথায় আছে জানি না।’

ওই যুবকের মা বলেন, ‘ওই ঘটনায় আমার ছেলে কোনোভাবেই জড়িত নয়। তাকে আদালতের সামনে উপস্থাপন করলে প্রকৃত সত্য জানা যেতো। কিন্তু ছেলে কোথায় আছে তা আমি জানি না। ছেলেকে ফেরত দেওয়ার আকুতি জানাই। আমার ছেলে কোথায় আছে তা জানলেও একটু স্বস্তি পেতাম।’

হামলার ঘটনায় ৩৭৫ জনকে এজাহারভুক্ত এবং ১৫-১৬ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ১৮টি মামলা করেছিল পুলিশ। পরবর্তীতে এসব মামলায় এক হাজারের বেশি জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। কিন্তু ১০ বছরেও একটি মামলার বিচারকাজ শুরু হয়নি। 

এদিকে, বিচার শুরু না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতারা। তারা বলেছেন, বিচারের নামে প্রকৃত অপরাধীদের ধরার পরিবর্তে যেন নিরপরাধ কোন ব্যক্তিকে হয়রানি করা না হয়। তারা শান্তি ও সম্প্রীতিতে বসবাস করতে চান।

রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতা কেতন বড়ুয়া বলেন, ‘ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে রামুতে মিটিং-মিছিল হয়েছিল। ওই সময়ে ছবি-ভিডিওতে অনেক ব্যক্তিকে চেনা গেছে। তাদের ইন্ধনে হামলা হয়েছিল। কিন্তু মামলার পর চিহ্নিত অনেক ব্যক্তি বাদ পড়েছেন। পাশাপাশি নিরপরাধ অনেকে হয়রানির শিকার হয়েছেন। বৌদ্ধ ধর্ম শান্তির কথা বলে। আমরা শান্তি চাই। শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে এখানে বসবাস করতে চাই।’

বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের আরেক নেতা বিপুল বড়ুয়া বলেন, ‘১০ বছরেও বিচারকাজ শুরু হয়নি। আমরা সেদিনের ঘটনা ভুলতে বসেছি। পুড়িয়ে দেওয়া বিহার নান্দনিকভাবে নির্মাণ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন শান্তিতে আছি। এর বেশি কিছু চাওয়ার নেই আমাদের।’

কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি ও রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের ভিক্ষু প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, ‘এ ঘটনার পর এলাকায় সাম্প্রদায়িক ও সামাজিক সম্প্রীতি নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছিল, তা এখন কেটে গেছে। এর ধারাবাহিকতা রক্ষা জরুরি। তবে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করা জরুরি। এটি করতে গিয়ে নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন। আমরা বিশৃঙ্খলা চাই না। শান্তিতে সবার সঙ্গে বসবাস করতে চাই।’

বিচারকাজ শুরু না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, ‘ওই ঘটনায় মামলা হয়েছিল ১৯টি। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে ১৮টি মামলা করেছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে একটি মামলা করলেও পরে বিবাদীদের সঙ্গে আপস করে প্রত্যাহার করে নেন। অপর ১৮টি মামলার সাক্ষী না পাওয়ায় বিচার শুরু নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হয়। সাক্ষীরা আদালতে এসে সাক্ষ্য দিতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে বিচারকাজ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতারাও সাক্ষ্য দিতে বা আদালতে হাজির হওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এসব কারণে বিচারকাজ শুরু হয়নি।'

 

 

মত প্রকাশের স্বাধীনতা থেকে আরও


Link copied